পারিজাত মোল্লা: চলতি সপ্তাহে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বহাল রাখে রামনবমী মামলায় এনআইএ তদন্ত। কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিটি ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ রয়েছে রাজ্যকে দু সপ্তাহের মধ্যে ওই মামলার সমস্ত নথি হস্তান্তর করতে হবে এনআইএ’কে। এতেও কোন সহযোগিতা পাইনি এনআইএ, এই অভিযোগ নিয়েই অত্যন্ত দ্রুততাই বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এর এজলাসে দারস্থ হলো এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। দ্রুত শুনানির আর্জি গ্রহণ করেছে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ।
আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। রামনবমীর হিংসা নিয়ে এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েই রাজ্য সরকার এই তদন্তে আটকাতে পারেনি। এনআইএ-র অভিযোগ, -‘আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার কোনও নথি দিচ্ছে না। তাই বুধবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে অভিযোগ করা হয়েছে হাইকোর্টের কাছে।
গত সোমবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে বড়সড় আইনি ধাক্কা খায় রাজ্য সরকার। রামনবমীর হিংসা নিয়ে এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে রাজ্য সরকার। তবে ওইদিন রাজ্যের আবেদন শুনতেই রাজি হয়নি সুপ্রিম কোর্ট। এই ঘটনা নিয়ে এনআইএ তদন্ত স্থগিত করতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার।
গত সোমবার সেই আবেদন শুনতেই রাজি হল না দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্ট সেদিন জানিয়ে দেয় যে -‘তারা এই নিয়ে স্পেশাল লিভ পিটিশন বা এসএলপি গ্রহণ করতে আগ্রহী নয় ‘।
চলতি বছর রামনবমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক গোলমাল হয় হাওড়ার শিবপুর ও হুগলির রিষড়ায়। এই নিয়ে উত্তাল হয় রাজ্য রাজনীতি। বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হয়, এই গোলমালের নেপথ্যে রয়েছে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই কারণে এনআইএ তদন্তের দাবি তোলা হয় বিজেপির পক্ষ থেকে।
এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।সেই মামলায় রামনবমীর হিংসা নিয়ে এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। গত ২৭ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্ট এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশে আদালত জানায়, -‘ রাজ্য পুলিশকে এই ঘটনা সংক্রান্ত সমস্ত এফআইআর, নথি, বাজেয়াপ্ত হওয়া সামগ্রী এবং সিসিটিভি ফুটেজ এনআইএ-র তদন্তকারীদের হাতে তুলে দিতে হবে ‘।
এই হস্তান্তরের জন্য দুই সপ্তাহের সময়সীমাও বেঁধে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার।
সেখানে রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়, -‘রামনবমীর হিংসায় কোনও ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়নি’ । এর পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীর দায়ের করা মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেও সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়।কিন্তু সেই যুক্তির কোনও কিছু শুনতে রাজি হল না সুপ্রিম কোর্ট ।
এর ফলে বহাল রইল কলকাতা হাইকোর্টের রায়। এনআইএ এবার তদন্ত করবে রামনবমীর হিংসা সংক্রান্ত ঘটনার। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্ট এনআইএ তদন্তের যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে না।
এ বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখার কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। রামনবমীর মিছিল ঘিরে হাওড়ার শিবপুর, হুগলির রিষড়া-চন্দননগর, উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় গোষ্ঠীহিংসায় এনআইএ তদন্তের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে রাজ্য সরকারের তরফে যে আর্জি জানানো হয়েছিল, শীর্ষ আদালত গত মে মাসে তা খারিজ করে দিয়েছিল। এ বার খারিজ হয়ে গেল হাইকোর্টের নির্দেশ বাতিলের আর্জি। অর্থাৎ এনআইএ তদন্তের পথে কোনও বাধা রইল না।এরেই মধ্যে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে দারস্থ হলো এনআইএ।আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।