পারিজাত মোল্লা: সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উঠে পঞ্চায়েত নির্বাচন পরবর্তী কেন্দ্রীয় বাহিনীর মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত মামলা। ভোট পরবর্তী হিংসা মোকাবিলায় রাজ্যে আরও ১০ দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে থাকার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্পর্শকাতর এলাকা সনাক্ত করবে এবং সেখানেই এই বাহিনী মোতায়েন করতে হবে বলে নির্দেশে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। আর এই কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার প্রসঙ্গে কেন্দ্র এদিন কলকাতা হাইকোর্ট কে জানায়, -‘ পর্যায়ভিত্তিক বাহিনী প্রত্যাহার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র’।তাতে অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট।এদিন আদালতে কেন্দ্র জানায় ২ দফায় ১৩৯ কোম্পানির মত কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি, রাজ্য ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই নোডাল অফিসারের সঙ্গে অসহযোগিতা করে আসছে বলেও অভিযোগ করে কেন্দ্র।রাজ্যে ভোট পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনা করে হাইকোর্টের তরফে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মেয়াদ বৃদ্ধি করার বিষয়টি কেন্দ্রকে বিবেচনা করে দেখতে বলা হয়েছিল। আরও এক মাস রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা সম্ভব কি না?
কেন্দ্রের কাছে তা জানতে চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মামলাতেই কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, -‘আরও ১০ দিন রাজ্যে বাহিনী থাকবে’।পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা থেকে রাজ্যে যে ভাবে অশান্তি শুরু হয় তাতে ফল ঘোষণার পরেও ১০ দিন রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, -‘ ভোটের ফল জানার পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই এই নির্দেশ’। দেখা যায়, ভোটের ফল প্রকাশের পরেও জেলায় জেলায় অশান্তি-হিংসার ঘটনা ঘটছে।
এই পরিস্থিতিতে ১০ দিন পর কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে গেলে সন্ত্রাস আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, এই আশঙ্কা প্রকাশ করে আদালতের দ্বারস্থ হন আইনজীবী তথা বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চ জানায়, -‘ ভোটের ফল প্রকাশের পরে প্রথম ১০ দিন রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এর পরেও রাখতে হলে কেন্দ্রের মতামত প্রয়োজন।’এ প্রসঙ্গে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, -‘ সব অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। এফআইআর করা হয়েছে। কেন্দ্র আরও দশ দিন বাহিনী রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্য যাতে কাঁধে কাঁধ দিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে আদালত সেই সুযোগ দিক। এখন রাজ্যের সব জেলায় পুলিশের সঙ্গে তারা নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ করছে। কোথাও কোনও অভিযোগ আসেনি। এই সমস্ত জনস্বার্থ মামলাগুলো খারিজ করা উচিত’ ।
কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটির জেনারেল অশোককুমার চক্রবর্তী জানান, -‘ তাদের কাছে ২১৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর সবকটিই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে’। তারা নোডাল অফিসারকে স্পর্শকাতর বুথের তালিকা জমা দেয়নি বলে পাল্টা অভিযোগ তোলেন। মামলাকারী আইনজীবী বলেন, -‘ একাধিক মামলা হয়েছে। সবাই হলফনামা দিচ্ছে। কিন্তু মামলার আসল বিষয় হারিয়ে যাচ্ছে। যারা ঘরছাড়া, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, গণনা আদৌ হয়েছে কিনা এই বিষয়গুলোর উপর মূল গুরুত্ব আরোপ করা দরকার’।
শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, ”মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। এটা গুরুতর অভিযোগ। এ বিষয়ে কিছু করা প্রয়োজন’। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সমস্ত অতিরিক্ত হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি ।