বিশেষ প্রতিনিধি: দুর্বল গ্রামীণ শ্রমবাজার ভারতের বেকারত্বকে ৮ শতাংশ বাড়িয়ে তুলছে। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি প্রাইভেট লিমিটেডের মতে, জুনে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৪৫ শতাংশ। গত মাসে বেকারত্বের হার ছিল ৭.৬৮ শতাংশ। তথ্য অনুসারে, গ্রামীণ অঞ্চলে এই বছর ভারতের বেকারত্বের হার তৃতীয়বারের মতো ৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে। মার্চে দেশটিতে বেকারত্ব আবার ৭ দশমিক ৮ শতাংশে উঠেছে, যা তিন মাসের মধ্যে সব থেকে বেশি। গ্রামেও বেকারত্বের হার তিন মাসে সর্বোচ্চ। আর শহরে বেকারত্ব আবার সাড়ে ৮ শতাংশ পার করেছে। শহরাঞ্চলে বেকারত্ব গত মাসে ৭.৮৭% এ কমে গেলে, গ্রামীণ ভারতে দুই বছরে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ ৮.৭৩ শতাংশ দেখা গেছে।
দেশের গ্রামীণ জনসংখ্যার জীবিকার মূল উৎস কৃষি। তবে জুন মাসটি সাধারণত কৃষি খাতের জন্য একটি দুর্বল ঋতু। এই মাসে ভারতের গ্রামগুলিতে বেকারত্ব প্রবলভাবে বেড়ে যায়, কারণ মে মাসে ফসল কাটা শেষ হয় এবং নতুন ফসলের জন্য বপনের গতি শুধুমাত্র জুলাই মাসে বৃদ্ধি পায় যখন বর্ষা আসে।
ক্ষমতায় আসার পর পরই প্রধানমন্ত্রী যিনি ১০ লক্ষ সরকারি চাকরি প্রদানের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে নিয়োগপত্র বিতরণ করেন। তবে বর্তমানে বেকারত্ব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্যও একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর থেকেই ভারতের শ্রমবাজারের দুর্বলতার কারণে কাজের বাজার নিম্নমুখী। আবার চাকরি খোঁজা মানুষের সংখ্যা কিছুটা হলেও কমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে কাজের বাজারে অংশগ্রহণ ছিল ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ, মার্চে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে কর্মসংস্থানও ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশে নেমেছে। কর্মরত মানুষের সংখ্যা ৪০ কোটি ৯০ লাখ থেকে ৪০ কোটি ৭৬ লাখে নেমেছে।
এদিকে রাজ্যগুলোর মধ্যে হরিয়ানায় বেকারত্ব সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ। তারপরে রাজস্থানে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, জম্মু ও কাশ্মীরে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ, সিকিমে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ, বিহারে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ ও ঝাড়খন্ডে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
উত্তরাখন্ড ও ছত্তিশগড়ে বেকারত্ব ছিল সর্বনিম্ন—শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। তারপর পদুচেরিতে ১ দশমিক ৫ শতাংশ, গুজরাটে ১ দশমিক ৮ শতাংশ, কর্নাটকে ২ দশমিক ৩ শতাংশ আর মেঘালয় ও ওড়িশায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ভারতের সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, বিশ্ববাজারের সংকট না মেটা পর্যন্ত এই টানাপোড়েন চলবে। সেই সঙ্গে ভারতে মূল্যস্ফীতির হার এখনও বেশি। কিন্তু মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় যেভাবে লাগাতার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তাতে শিল্প সংস্থাগুলোর ঋণের চাহিদা কমছে। ফলে অনেক কোম্পানি নিয়োগ স্থগিত রেখেছে।
যদিও বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, অর্থনীতি ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে হলে বেকারত্বের হার কমানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। কারণ, মানুষের আয় বাড়লে তবেই ব্যয় বাড়বে, ফিরবে চাহিদা।