বিশেষ প্রতিবেদন: বর্তমান সময়ে মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন। সুস্থতার জন্য কি খাব আর কি খাব না, আর খেলেও তা কতখানি খাব তা নিয়ে দ্বন্দ্বের শেষ নেই। এই সময় একটি জিনিস বেশ ভাবিয়ে তুলছে, সেটি হল অ্যাসপারটেম নামক কৃত্রিম চিনি থেকে হতে পারে ক্যানসারের মতো মারণ রোগ। অ্যাসপার্টাম হল সুক্রোজের থেকে ২০০ গুণ বেশি মিষ্টি একটি উপাদান। যা কোল্ড ড্রিঙ্কে ব্যবহার করা হয়। বিগত ৩ দশক ধরে এর ব্যবহার হয়ে আসছে। ১৯৮১ সালে প্রথম এই উপাদান ব্যবহারে ছাড়পত্র দেয় ‘ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।’ সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টের এই প্রতিবেদন ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
এক মাস আগেই কৃত্রিম চিনির বহুল ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে হু-এর ক্যানসার গবেষণা সংস্থা আগামী মাসেই অ্যাসপারটেমকে কার্সিনোজেন (ক্যানসার সৃষ্টিকারী যৌগ) বলে ঘোষণা করবে।
প্রসঙ্গত ডায়েট কোক, নরম পানীয়ের ওপর মানুষের আকর্ষণ দীর্ঘকালের। বিশেষ করে গ্রীষ্মপ্রবণ দেশগুলিতে এর ব্যবহার বেশি দেখা দেয়। গরমের সময় ঠাণ্ডা নরম পানীয়ের বোতল খুলে দিব্যি গলায় ঢালতে দেখা যায় কম বেশি সকল মানুষকে। কিন্তু এবার ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের পরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তাহলে আমরা নরম পানীয় গলায় ঢেলে একটু আরাম পেতে গিয়ে ‘বিষপান’ করছি!
এই অ্যাসপারটেমকে সত্তরের দশকে বিজ্ঞানীর ছাড়পত্র দিয়েছিল চিনির বিকল্প হিসাবে। নরওয়ে,ফিনল্যান্ড, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি কিছু দেশে এটি নিয়ে সন্দেহ থাকলেও গোটা বিশ্বে ব্যাপক ব্যবহার এই রাসয়নিকের। ২০ বছর পরের গবেষণায় দেখা যায় এর মধ্যে থাকা মিথাইল এসটার, অস্পর্টিক অ্যাসিড,এবং ফাইনালইথিলিন শরীরে জমা হয়ে থাকছে এবং মানুষের মেটাবলিক সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে অনেক দিন পর। এতে থাকা হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন খুব ধীরে ধীরে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে, লিভার ফাংশনে প্রভাব ফেলছে, ধীরে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়াচ্ছে এবং প্রবল অনিদ্রা রোগ সৃষ্টি করছে।
অনেক চেষ্টা করেও আমেরিকার সেন্ট্রাল ড্রাগ এজেন্সি এর ক্লিনিকাল টেস্টের অনুমতি পায়নি। এক বছর আগে হু এবং ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এজেন্সি ফর ক্যানসারের তরফ থেকে এমনই ১৭ টি কেমিক্যাল নিয়ে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে বিভিন্ন বয়সের ১,০০,০০০ মানুষের মধ্যে সমীক্ষা ও ক্লিনিকাল টেস্ট করেন।
কোকা-কোলা আসলে কি: কোকা-কোলা বা ওই জাতীয় নরম পানীয় আদতে কার্বোনেটেড ওয়াটার বা জলে মেশানো কার্বন ডাই অক্সাইড। স্বাদ মিষ্টি করার জন্য তাতে চিনি বা তার বদলে অ্যাসপারটেম দেওয়া থাকে। আর তার সঙ্গে দেওয়া থাকে প্রিজারভেটিভ ও অন্য কিছু স্বাদবর্ধক উপাদান। এই কার্বন ডাই অক্সাইড জলের সঙ্গে যে অ্যাসিড তৈরি করে তাতে দাঁতের ক্ষতি করে।
এতে থাকা ফসফোরিক অ্যাসিড শরীর থেকে ভিটামিন ও শরীর থেকে বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান প্রস্রাবের আকারে বের করে দেয়। এই পানীয় স্থূলতার অন্যতম কারণ। কোকা-কোলায় থাকা ক্যাফিন হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। কোকা-কোলাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কৃত্রিম রং ( ক্যারামেল কালার কার্সিনোজেনিক) এর ব্যবহারের শরীরে মারণ রোগ ক্যানসার বাসা বাঁধতে পারে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।