পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় এখনো পর্যন্ত বাংলায় মৃত ৬২ জন। এই সংখ্যাটা যাদের সনাক্ত করা গেছে তাদের। কিন্তু যাদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি এমন দেহের সংখ্যা ১৮২। একই সঙ্গে রেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা লুকানোর অভিযোগ তুলেছেন মমতা।
প্রসঙ্গত গতকালই রেল দুর্ঘটনার পর বালাসোর পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনা সব ঘুরে দেখার পাশাপাশি তিনি ঘুরে দেখেন হাসপাতালও। এরপর রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকেই আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি। দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমি মানস ভুঁইয়া, দোলা সেন ও প্রাক্তন রেল মন্ত্রকের আধিকারিক জয়ন্ত সাহাকে পাঠিয়েছিলাম। তারা ওখানে ৩ – ৪ ঘণ্টা ছিল। সাথে সাথে আমরা মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক ও প্রচুর অফিসারদের টিম পাঠিয়েছি। প্রায় ১৫০টা অ্যাম্বুল্যান্স, ৫০ জনের মতো চিকিত্সক ও নার্স, বাস এই রাজ্য থেকে গিয়েছিল। একইসঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা দলও পাঠানো হয়েছিল। মমতা বলেন দুর্ঘটনা খবর আসার পর থেকেই উড়িষ্যার সরকারের সঙ্গে কথা বলে আমরা সমন্বয়ে রেখে উদ্ধারের কাজ চালিয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন অভিযোগ করেন, সেন্ট্রাল কথা বলে বেশি, করে কম। ধারের কাজটা কাজটা আসলে করেছে দুই রাজ্য সরকার।
এদিন এ রাজ্যের হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এখনো পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে রেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৬২ জন। মুখ্যমন্ত্রীর মতে এই সংখ্যাটা তাদের যাদের এখনো পর্যন্ত শনাক্ত করা গিয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত যাদের সনাক্ত করা যায়নি সেই সংখ্যাটা অনেক। আর পরিচয় মেলেনি এরকম ১৮২ জন রয়েছেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, এই মুহূর্তে আহত ২০৬ জনকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে এনে কলকাতায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ওড়িশায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৭৩ জন। আর ৫৬ জনকে প্রাথমিক চিকিত্সার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এই দুর্ঘটনার পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও এদিন তুলে ধরেন মমতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকেই পরিস্থিতির ওপরে নজর রাখছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে । রাজ্যের চারটি জায়গা থেকে যথাক্রমে খড়্গপুর, সাঁতরাগাছি, হাওড়া এবং নবান্ন থেকে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ থেকে শুরু করে আহতদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত প্রতিক্ষেত্রেই নবান্নের তরফে আইএএস অফিসার মোতায়েন করা হয়েছে। উড়িষ্যার থেকে উদ্ধার করে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ইতিমধ্যে ৭০০-৮০০ জনকে বাংলায় ফিরিয়ে সম্ভব হয়েছে।
এদিন নবান্ন থেকে আরো একবার রেল দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মমতা। একই সঙ্গে আহত এবং ট্রমাটাইজ অবস্থায় যারা রয়েছেন তাদের জন্য আলাদা ভাবনা রয়েছে নবান্নের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন,দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা এবং বেশি আহতদের এক লক্ষ টাকা এবং কম আহতদের পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই ঘটনায় যারা বিশেষ আহত হননি অথচ ট্রমার মধ্যে রয়েছেন তাদের জন্য আলাদা ভাবনা রয়েছে রাজ্যের। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, তাদের এককালীন ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া আগামী তিন মাস দেয়া হবে ২০০০ টাকা করে। সঙ্গে অবশ্যই থাকবে ত্রাণ সামগ্রী।