পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: অভিশপ্ত ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুপুরী ওড়িশার বালেশ্বর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে দেহের সারি। হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা চলছে। এখনও বহু মৃতদেহের নাম পরিচয় জানা যায়নি। দেহের মাথার উপর নাম্বার লিখে রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে দেহগুলির পরিচয় নিছকই এক ‘নাম্বার’।
শুক্রবার ট্রেন দুর্ঘটনা খবর ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই মর্মান্তিক ঘটনা দেখে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি বলে জানিয়েছেন এক যুবক। ২১ বছর বয়সি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই যুবক জানিয়েছেন, তিনি ইঞ্জিয়ারিংয়ের স্নাতক। ভদ্রক জেলার বাসিন্দা তিনি। সন্ধ্যা ৮ টা নাগাদ তিনি ও তার বন্ধুরা এই দুর্ঘটনার খবর পান। এক মুহূর্ত দেরি না করে, দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে আসেন তারা। রাত ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি দেখে শিউরে উঠি। চারদিকে এই বীভৎস অবস্থা আগে কোনও দিন দেখিনি। চারদিকে শুধুই লাশ। প্রায় ৪০০-৪৫০ দেহ তো হবেই। এর মধ্যে অনেক দেহ বিকৃত হয়ে গেছে। চারদিকে হাত-পা আলাদা করে পড়ে রয়েছে। অবস্থা দেখে আঁতকে উঠি।
স্থানীয়দের কাছে শুনি, ঘটনাস্থলটি হাইওয়ের কাছেই। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। প্রশাসনের আসার আগে স্থানীয়রাই বাইক, অটো করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দেয়। চারদিকে শুধুই রক্ত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই যুবক জানান, তিনি ও তার বন্ধুরা মিলে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যান। বহু মানুষ ইতিমধ্যেই খবর পেয়ে হাসপাতালে রক্তদানের জন্য ভিড় করেন। বালেশ্বর থেকে বহু মহিলা সহ ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও আহতদের দেখভালের জন্য হাসপাতালে পৌঁছে যান।
ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা জানান, আহতদের সাহায্যে স্থানীয় বহু মানুষ এগিয়ে এসেছে। উদ্ধারেও তারা হাত লাগিয়েছে। বহু মানুষ রক্ত দিতে আসে। অনেক জায়গা থেকে সাহায্যের জন্য আমার কাছে অনুরোধ এসেছে। এটা সত্যিই একটা মানবিক উদ্যোগ। উদ্ধারকারীদলের সঙ্গে বহু স্থানীয় মানুষ কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় সাংবাদিক জানান, স্থানীয়রা প্রায় ১১০০ ইউনিট রক্ত দান করেছেন হাসপাতালগুলিতে। দুর্ঘটনা এতই মারাত্মক ছিল যে, দুটি বগির প্রায় ১৫০ জন যাত্রী একের অপরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আটকা পড়ে গিয়েছিলেন। তাদের উদ্ধারে সেনা, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে হাত লাগায় স্থানীয়রাও।
সকালে আহতদের বালেশ্বরের সোরো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বহু মানুষকে আনা হচ্ছিল। আহতদের ভিড় এতটাই বাড়ছিল যে তাদের বাঁচাতে মেঝেতেই রেখেই স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল। হাসপাতালের একদিকে আহতদের চিকিৎসা চলছে অন্যদিকে একটি ঘরে লাশের সারি। এই ভয়াবহ ঘটনা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।