আবদুল ওদুদঃ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক… এই ধ্বনিতে ফের মুখরিত হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হজ কমিটির দফতর মদিনাতুল হুজ্জাজ। রবিবার ভোর ৫ টার পর থেকে এই ধ্বনি মুখে উচ্চারণ করতে করতে রাজ্য সরকারের এসি বাসে করে কলকাতা বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন ৩২৬ জন হজযাত্রী। কলকাতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরনো টার্মিনালে সকলেই উপস্থিত হন। হজযাত্রীদের শুভেচ্ছা এবং দোয়া নিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে হাজির হন পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী।
কিছুটা দেরিতে এসে পৌঁছান কলকাতা পুরসভার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর দেরি দেখে অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন তিনি আসবেন তো? কেননা গত কয়েক বছর ধরে হজযাত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে এবং দোয়া নিতে বিমান বন্দরে উপস্থিত থেকেছেন ফিরহাদ হাকিম। শেষ পর্যন্ত বিমান ছাড়ার বেশ কিছুক্ষণ আগেই তাঁর সহধর্মীনি ইসমাতারা হাকিমকে নিয়ে বিমান বন্দরে উপস্থিত হন ফিরহাদ হাকিম। হজযাত্রীরা বিমানে উঠার পরেই ফিরহাদ হাকিম বিমানের কাছে গিয়ে পতাকা নাড়িয়ে ২০২৩ সালের হজযাত্রার সূচনা করেন। তার আগে বিমানের মধ্যে থাকা সমস্ত হজযাত্রীদের ‘হজ মুবারক’ জানান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি যে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন সে বিষয়টি তাঁদের অবগত করান।
প্রসঙ্গত,২০২০ সালের করোনা মহামারির পর দু’বছর সীমিত আকারে হজ পালন হয়েছে বিশ্বজুড়ে। এই বছরই আগের মতো হজের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হল। এ বছর কোনও বিধি নিষেধ ছিল না। হজ যাত্রীদের মধ্যেও ছিলনা কোনও আতঙ্কের ছাপ। প্রত্যেকেই সুস্থ এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে হজের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এবছরের হজযাত্রার সূচনা উপলক্ষে বিশেষ মোনাজাত হয় বিমানবন্দরে। সেই দোয়ায় সামিল হল আগত সকলেই। কলকাতা রেডরোডের ইমাম ক্বারি ফজলুর রহমান সাহেব দোয়া করেন।
প্রথম বিমানের হজযাত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন, হজ কমিটির চেয়ারম্যান সাংসদ নাদিমুল হক, নাখোদা মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিক কাসেমি, ইমামে ইদাইন ক্বারি ফজলুর রহমান, পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক তথা সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুল গণি, সংখ্যালঘু দফতরের প্রধান সচিব গুলাম আলি আনসারি, বিশেষ সচিব সাকিল আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ওবাইদুর রহমান,ওয়াকফ বোর্ডের সিইও আহসান আলি, রাজ্য হজ কমিটির কার্যনির্বাহি আধিকারিক মুহাম্মদ নকি, বিধায়ক আমিরুল ইসলাম।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধক্ষ্য একেএম ফারহাদ, হাজি রহিম বক্স ওয়াকফ এস্টেট কমিটির সম্পাদক কুতুবউদ্দিন তরফদার, নাবাবিয়া মিশনের সম্পাদক সাহিদ আকবার, হজ কমিটির সদস্য আবু সুফিয়ান, কামরুল হুদা, শামিম রেহান খান, রাকিবুল আজিজ সহ অন্যান্য সদস্যরা। হজযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যেমন উনসানি সিদ্দিকিয়া হাজি সেবা সমিতি, বেঙ্গল হাজি ফোরাম নীরবে কাজ করে চলেছে। মদিনাতুল হুজ্জাজে হজযাত্রীদের নানা পরিষেবা দিতে হাজি আনসার আলিখান ও হাজি রমযান-সহ অন্যান্যরা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে চলেছেন।
এক প্রতিক্রিয়ায় ফিরহাদ হাকিম বলেন, হজের প্রথম উড়ান তাই এখানে আমরা এসেছি হজযাত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে। পশ্চিমবাংলা থেকে সউদি আরবের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আমাদের সকলের তরফ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। সমস্ত হজযাত্রীদের হজ যাতে আল্লাহ কবুল করেন এবং হজ সম্পন্ন করে সকলে আবার এই বাংলায় সুস্থভাবে ফিরে আসবেন এই দোয়া করা হয়। বাংলার জন্য যাতে হজযাত্রীরা আল্লাহর পবিত্র ঘরে দোয়া চান সেই আবেদনও জানানো হয়।
পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী বলেন, হজের প্রথম উড়ান আমরা এসেছিলাম রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে হজযাত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে এবং দোয়া নিতে। এদিন দুপুর ১.৩০ মিনিটে হজযাত্রীদের নিয়ে দ্বিতীয় বিমানটি ছেড়ে যায়। সেই বিমানেও যাত্রী ছিলেন ৩২৬ জন। মূলত কলকাতা, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলির হজযাত্রীরা আজ উড়ান ধরেন। বোহরা সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেও এদিন হজ করতে বেশ কিছু সংখ্যক হজযাত্রী কলকাতা থেকে সউদিতে পৌঁছান।