পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: লাভ জিহাদ, গো-রক্ষকদের হাতে মুসলিম যুবকদের নিগ্রহ থেকে পিটিয়ে হত্যা, সম্মানরক্ষার্থে খুন, ধর্মীয় ভেদাভেদকে সামনে রেখে ভোটের প্রচার বর্তমান সময়ে এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ক্রোধের শিকার হচ্ছে নিরীহ মানুষ। সেখানে এক অন্য চিত্র দেখা গেল উত্তরাখণ্ডে। সেই রাজ্যের এক বিজেপি নেতার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা সূত্রে দুজনের আলাপ, সেই থেকেই প্রেম। মণিকা ও মণীশ আহমেদ দুজনেই লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। সেই সূত্রেই দুজনের আলাপ থেকে শুরু করে মন দেওয়া-নেওয়া। কিন্তু মণিকা ও মণীশের পরিবার এই বিয়ের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। দু’জনেই বাড়িতে জানিয়েছিলেন, একে অপরকে ভালোবাসেন, বিয়ে করতে চান তাঁরা। দুই পরিবারই সাদরে সায় দিয়েছেন সন্তানদের ইচ্ছায়।
মণিকার বাবা বিজেপি নেতা, আরএসএস কর্মী যশপাল পেনাম। প্রথাগত বিজেপি নেতাদের থেকে উল্টো পথে হেঁটে যশপালের বক্তব্য, জাত ধর্ম বলে কিছু হয় না। মানবিকতাই সবচেয়ে বড় ধর্ম।
উত্তরাখণ্ডের পৌরী গারওয়াল নগরপালিকা পুরসভার চেয়ারম্যান যশপালের এই মন্তব্য ঘিরে গেরুয়া শিবিরে ঘোরতর জল্পনা শুরু হয়েছে। যশপালের এই ধরনের মত মেনে নিতে পারছেন না রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রিত গৌ সুরক্ষা আয়োগ অর্থাৎ কাউ প্রোটেকশন কর্পোরেশনের সদস্যরা। স্থানীয় বিজেপি নেতা ধরমবীর গোঁসাইয়ের সাফ কথা, আমরা এই বিয়ে মানতে পারছি না। এটা উত্তরাখণ্ডীদের ঐতিহ্যের বিরোধী।
এদিকে যশপালের বক্তব্য, ‘যারা নিন্দামন্দ করছেন তাদের মাথায় রাখা দরকার, এটা একবিংশ শতাব্দী। ছেলেমেয়েদের উপর নিজেদের ইচ্ছা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। ওদের ইচ্ছাকেও মর্যাদা দিতে হবে। প্রেম-ভালোবাসা-বিয়েকে ধর্মের আতস কাচের নীচে দেখার কোনও অর্থ হয় না। দুই তরুণ-তরুণীর নিজেদের ভালো লাগলে ধর্ম সেখানে গৌণ।’
২৮ মে ঠিক হয়েছে মণিকা আর মণীশ আহমেদের বিয়ে। পাত্র-পাত্রীর ছবি ও পরিচয় দিয়ে কার্ড ছাপানো হয়েছে। নিমন্ত্রণপত্র বিলিও প্রায় শেষ পর্যায়ের মুখে। যথারীতি নিমন্ত্রণের কার্ডের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। আর তাতেই ঐতিহ্যরক্ষার ধ্বজা তুলে বিয়ে বন্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা।
উত্তরপ্রদেশের মতো উত্তরাখণ্ডেও চালু আছে লাভ জিহাদ বিরোধী আইন। ফলে পুলিশ-প্রশাসন যে কোনও সময় এসে পাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে, এই বিয়ে কি সত্যিই প্রেমের পরিণতি নাকি ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তকরণের চেষ্টা, এক কথায় যা লাভ জিহাদ। শুধু আইনকানুন আর পুলিশ প্রশাসনই নয়, আছে লাভ জিহাদ বিরোধী ‘লেঠেল বাহিনী’। বর্তমানে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ কাহিনি নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ।
বলা যেতে পারে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের রোষানলের কবলে মণিকা আর মণীশের বিয়ে!