বিশেষ প্রতিবেদন: রোযা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। প্রতিবছর রমযানে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভের জন্য রোযা পালন করে থাকেন। রোযা শুধু ধর্মীয় বিধিবিধানের অংশ নয়, বরং এটি বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যনীতিরও একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে। এর রয়েছে শারীরিক ও মানসিক নানা উপকারিতাও। রোযা থাকলে দিনের বেশিরভাগ সময় না খেয়ে থাকতে হয়। এর ফলে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিন কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পায়। শরীরকে বিষমুক্ত করার একটি কার্যকরী উপায় রোযা। যারা ওজন কমাতে চান, তারা সহজেই এ সময়টা কাজে লাগাতে পারেন। কারণ, রোযা রাখার পাশাপাশি ইফতার ও সেহরিতে পুষ্টিকর খাবারকে প্রাধান্য দিলে খুব সহজেই ওজন কমানো যেতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, রমযানে নিয়মিত রোযা রাখার ফলে স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন: উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগ ও স্থূলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোযায় পেট খালি থাকার কারণে খাবার হজমের অ্যাসিড এই সময় ধীরগতিতে নিঃসরিত হয়, যা হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোযার কোনও বিকল্প নেই। কারণ দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়। এ ছাড়া যেকোনও নেশাদ্রব্য থেকে মুক্তি পেতেও রোযা একটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
রোযার শারীরিক উপকারিতার সঙ্গে রয়েছে মানসিক উপকারিতাও। রোযা যেহেতু ধর্মীয় একটি ইবাদত তাই নিয়মিত রোযা রাখার ফলে মানসিক প্রশান্তি অনুভব করা যায়। এ সময় স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়, যা ব্রেনের কর্মক্ষমতাকে অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া দীর্ঘ এক মাস রোযা রাখার অভ্যাসে মুসলিমরা সঠিক পথে চলার শক্তি পান ও পাপ করা থেকে বিরত থাকেন। নিয়মিত যারা রোযা রাখেন ও আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেন তাঁরা নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে উন্নত করার সুযোগ পান। রোযার গুরুত্ব অনুধাবন করে মার্কিন চিকিৎসক আইজাক জেনিংস বলেছেন, যারা আলস্য ও গোঁড়ামির কারণে এবং অতিভোজনের কারণে নিজেদের সংরক্ষিত জীবনীশক্তিকে ভারাক্রান্ত করে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়, রোযা তাদের এ বিপদ থেকে রক্ষা করে। রোযা রাখার ফলে আমাদের শরীর নানা ধরনের চাপ নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। ফলে রোযাদার ব্যক্তি কখনও খিঁচুনি এবং মানসিক অস্থিরতার মুখোমুখি হন না। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে রোযার গুরুত্বের বিবরণ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টির সঙ্গে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও রোযার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও ইতিবাচক জীবনযাপনের জন্য রোযা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।