পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: এবারে ডুয়ার্সের চা- বাগানে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী জন বারলার বাড়ির সামনে ধর্নায় রাজ্যের শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক।
জানাগেছে ,গত ১ লা মার্চ তৃনমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আই এন টিটি ইউসির পক্ষ থেকে চা বাগান তৃণমূল কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠনের তরফে জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি রাজেশ লাকড়ার নেতৃত্বে জন বারলার বাড়ির সামনে দ্বিতীয়বার ফের ধর্নায় বসা হয়। সেখানে মূলত চার দফা দাবী নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে জবাব চাওয়া হয় ।কিন্তু মন্ত্রী জন বারলা না থাকায় তার কোন জবাব পাওয়া যায়নি।
শনিবার সেই ধর্না মঞ্চে এসে যোগদান করলেন রাজ্যের শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক এবং তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডুয়ার্সের বানারহাটের লক্ষ্মীপারা চা- বাগানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলার বাড়ির সামনে তৃনমূল কংগ্রেসের ঘোষিত ধর্না কর্মসূচিতে যোগ দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃনমুল কংগ্রেসের এই রাজ্য নেতা।
তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফে জানানো হয় চা শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড দুর্নীতি করা হয়েছে,এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করা হয়। সেই সাথে দাবি তোলা হয় চা শ্রমিকদের ৫৮ বছরে অবসর দেওয়া যাবে না। পড়ুয়াদের স্কলারশিপ পুনরায় চালুর দাবী করা হয়।
শ্রমিক নেতাদের কথায়, কেন্দ্রীয় বাজেটে চা কথাটিই উল্লেখ করেনি, এমনকি এর আগে কেন্দ্রীয় বাজেটে চা বাগানের জন্য ১০০০/- কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও সেই টাকার কোন খবর পাওয়া যায়নি। আর এই সমস্ত দাবি নিয়েই শুরু হয়েছে ধর্না কর্মসূচি।
উল্লেখ্য, এর আগে লোকসভা ভোটের প্রচারে আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসে নিজেকে চা ওয়ালা এবং জন বারলাকে চা শ্রমিক ছিল বলেও দাবী করেছিলেন।
তৃণমূলের কটাক্ষ শুধুমাত্র যা বলয়ের ভোট আদায় করতেই এই সমস্ত পন্থা অবলম্বন করেছিল বিজেপি। আদতে চা বাগানের মানুষের জন্য কোন কাজ তারা করেনি। তাই শান্তিপূর্ণ ভাবে বিজেপি বিধায়ক ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়ির সামনে ধর্নায় সামিল হয়েছে তৃনমূল কংগ্রেস। চা বাগান এলাকার মানুষদের দাবি পূরণ না হলে আগামী দিনে আরো বড় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে। আগামী ৬ তারিখ পর্যন্ত এই ধরনা কর্মসূচি চলবে বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য গত বছর ১০’ই সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়ির মালবাজারে চা বাগান শ্রমিক সংগঠনের সভায় এসেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় সেই সভা মঞ্চ থেকে চা বাগান শ্রমিকদের বঞ্চনার কথাটি তুলে ধরেছিলেন তিনি। পিএফ সহ বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন সেই মঞ্চ থেকে। কার্যত সেই সভামঞ্চ থেকেই এই আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি হয়েছিল। সেই মতো এর আগেও বিজেপির মন্ত্রী এমএলএ এমপির বাড়ির সামনে ধরনায় বসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকি পিএফ অফিস অভিযান পর্যন্ত করা হয়। তবে দাবি আদায় না হওয়ায় ফের আন্দোলনে শামিল তৃণমূল কংগ্রেস।
রাজ্য সরকারের শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, আমাদের এই আন্দোলন চা বাগানের শ্রমিকদের জন্যে। ৩৪ বছর ধরে সিপিআইএমের সময় যেভাবে শ্রমিকরা বঞ্চিত হয়েছে সেই সময় বছরে কত টাকা করে মাইনে বাড়তো? এক টাকা, দেড় টাকা দু টাকা করে মাইনে বাড়তো। সিপিআই (এম) সরকার ক্ষমতার থেকে সরে যাওয়ার পর আমাদের সরকার আসার পর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দায়িত্ব নেবার পরে তার নির্দেশে আজকে ২৩২ টাকা তারা পাচ্ছেন ।আগামীতে মধ্যে আরো বেড়ে যাবে। হেলথ সেন্টার, ক্রেশ বিনা পয়সায় রেশন কন্যাশ্রী সহ সমস্ত রকমের প্রকল্পে চা বাগানের শ্রমিকরাও উপকারী। উল্টো দিকে যারা বিজেপির নেতা-মন্ত্রী তারা চা – বাগানের শ্রমিকদের কথা ভাবেন না। আমার সামনেই চা বাগান শ্রমিকের বাড়ি আর যার বাড়ির সামনে রয়েছি তিনি এই এলাকার সাংসদ ও মন্ত্রী তফাৎ ও সাধারণ মানুষ নিজে চোখেই দেখুক। শ্রমিকদের স্বার্থে আন্দোলন এভাবেই লাগাতার চলবে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী জন বাড়লা বলেন, মানুষ আগামী দিনেও পঞ্চায়েতে আমাদের পাশে থাকবে। এরকম সন্ত্রাস করে নয় কোনো যুক্তি না থাকলে যা হয়। সত্যি করে যদি পিএফ সমস্যা পেনশনের সমস্যা সমাধান করতে চাও তাহলে এখানে না বসে নয় এটা ট্রেড ইউনিয়ন গুলোর সঙ্গে বসতে হবে। মালিক , অ্যাসোসিয়েশন, লেবার কমিশনার সকলের সঙ্গে বসতে হবে।এক টেবিলে সকলকে বসতে হবে। এখানে বসে কিছু হবে না।কেন্দ্র সরকার রাজ্য ও সরকার মিলে কাজ করতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয় তাহলে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার বসে এক টেবিলে তবেই সমস্যার সমাধান হয়। রাজ্য সরকারই বসে না।মানুষকে এভাবে বিভ্রান্ত না করে চলুন একসঙ্গে বসে আলোচনা করি। মানুষকে ধমক চমক দিয়ে বাড়ির সামনে ধর্না দিবা এতে কিছু লাভ হবে না। লেবার কমিশনারের কাছে যাও। ওখানে ধরনা দাও। পিএফ ডিপার্টমেন্ট আমার নয়। যখন সাংসদ ছিলাম তখন দায়িত্ব ছিল। এখন আমি মিনিস্টার আমার কোন দায়িত্ব নেই। যে সমস্ত মালিকরা পিএফ জমা করছে না এরকম অনেকের নামে থানায় কেস করা হয়েছে। পুলিশ একজনকেও অ্যারেস্ট করছে না।অ্যারেস্ট করলে ভয়ে বাকিরা সাহস পেত না। রাজ্য সরকার স্টেপ নিচ্ছে না। থানা ঘেরাও করলে পুলিশ অ্যারেস্ট করবে মালিকরা সব আবডেট হয়ে যাবে।