পারিজাত মোল্লা: মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে ‘মানবিক’ বিচারপতি। হ্যাঁ, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু চলতি মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা ভেবে আপাতত ভুয়ো শিক্ষকদের চাকরি বাতিল ঘোষণা হতে বিরত থাকলেন। তবে পরীক্ষা শেষ হলে তিনি আগেকার মত কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
হাইকোর্টের নির্দেশেই চাকরি গেছে নবম-দশম শ্রেণির বহু শিক্ষকের। সেইসব শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। তার মধ্যেই সোমবার বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু চাকরি বাতিল নিয়ে বড় মন্তব্য করেন।
এদিন তিনি এজলাসে বলেন, ‘এখন মাধ্যমিক চলছে। এর মধ্যে ভুয়ো শিক্ষকদের চাকরি বাতিল হলে পুরো পরীক্ষায় প্রভাব পড়তে পারে। পরীক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়তে পারেন।’
এদিন নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির এক মামলার শুনানি চলে বিচারপতি বসুর এজলাসে। তবে এদিন এই মামলায় কোনও নির্দেশ দেননি বিচারপতি। কারণ তিনি মন্তব্য করেন, ‘মাধ্যমিক পরীক্ষা মিটলে এই নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে আদালত।’
বিচারপতি বসুর পর্যবেক্ষণ, ‘২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নবম-দশম শ্রেণিতে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়। তার মধ্যে ১০ শতাংশ বা প্রায় হাজারের বেশি শিক্ষকের নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে।’
সেইসব শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি বেতন বন্ধের কথাও বলা হয়।
উল্লেখ্য, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ৯৫২ জনের বিরুদ্ধে ওএমআর শিট বিকৃতি করে অসাধু উপায়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলায় ৯৫২ জনের মধ্যে ৮০৫ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত। সেই মতো সুপারিশপত্র বাতিলের কাজ শুরু করেছে কমিশন।প্রথম ধাপে ৬১৮ জন ‘অযোগ্য’ শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে কমিশন। সুপারিশ বাতিল করা হয়েছে তাঁদের।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষকরা সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে ছুটেছেন। যদিও ডিভিশন বেঞ্চ এব্যাপারে এখনই কোনও নির্দেশ দেয়নি।মাধ্যমিক মিটলে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে আদালত।”,
এদিন মামলার শুনানি পর্বে জানান বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু।”২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় নবম-দশম শ্রেণিতে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়। তার মধ্যে ১০ শতাংশ বা প্রায় হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে।” পর্যবেক্ষণ বিচারপতি বসুর।
নবম-দশম শ্রেণিতে বিকৃতওএমআর শিটে চাকরি মামলার রায়দান স্থগিত ডিভিশন বেঞ্চে। সেই রায়ের দিকে তাকিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন।নবম-দশম শিক্ষক পদে ৮০৫ জনের চাকরি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ‘ডিভিশন বেঞ্চ দীর্ঘসময় ধরে রায় ঝুলে থাকলে কমিশন নিজে থেকেই পদক্ষেপের কথা ভাববে। যেহেতু বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বা বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশে ডিভিশন বেঞ্চ কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি এখনও’। আদালতে এদিন এমনই সওয়াল করেন এসএসসি-র আইনজীবী।
ইতিমধ্যে ৯৫২ জনের বিকৃত ওএমআর শিট উদ্ধার করেছে সিবিআই। তাঁদের ওএমআর শিট নিজেদের সাইটে প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। এই ৯৫২ জনের মধ্যে ৮০৫ জনের চাকরি বাতিল নিয়ে পদক্ষেপ শুরু করেছে এসএসসি। ৬১৮ জনের চাকরি বাতিলের সম্ভাব্য তালিকাও প্রকাশ করেছে এসএসসি। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।