পুবের কলম প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে কোভিড-১৯ রোগ কি বিদায় নিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে? কেননা, প্রায় তিন বছর পর কোভিড-১৯-এর দৈনিক পরিস্থিতি জানানোর বুলেটিন আর প্রকাশ করছে না এই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
২০১৯-এর শেষের দিকে চিনে প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছিল কোভিড-১৯ রোগকে। এর পরের ইতিহাস এখনও তাজা স্মৃতি হিসাবে রয়ে গিয়েছে।
এ দিকে, পশ্চিমবঙ্গের কোভিড-১৯-এর দৈনিক পরিস্থিতির বিষয়ে তথ্য জানিয়ে ২০২০-র পাঁচ ফেব্রুয়ারি প্রথম বুলেটিন প্রকাশ করে এই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সেই শুরু। কোভিড-১৯-এর তথ্য প্রকাশের এই বুলেটিন হয়ে ওঠে সরকারের কার্যত এক মুখপত্র। প্রায় তিন বছর পর গত ২৯ জানুয়ারি থেকে কোভিড-১৯-এর এই দৈনিক বুলেটিন আর প্রকাশ করছে না রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
তা হলে কি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদায় নিয়েছে কোভিড-১৯? ২০১৯-এর শেষের দিকে চিনে প্রথম কোভিড-১৯-কে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর পর বিশ্বজুড়ে এই রোগের অতিমারির জেরে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে লকডাউন করা হয়েছিল।
এই অতিমারিতে বহু মানুষকে আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীনও হতে হয়েছে। এ দিকে, তিন বছর পর ২০২২-এর শেষের দিকে চিনে ফের কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ বহু গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে। যার জেরে এমন আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়তে থাকে, ফের কি স্বমহিমায় ফিরে আসছে কোভিড-১৯?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বিদায় নেয়নি, কোভিড-১৯ এখনও রয়ে গিয়েছে কোনও কোনও জায়গায়।’ আগেই অবশ্য বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন অংশের তরফে এমনই জানানো হয়েছে, ইনফ্লুয়েঞ্জা যেমন বিশ্ব থেকে বিদায় নেয়নি, তেমনই কোভিড-১৯-ও থেকে যাবে। তবে, এর প্রভাব কমে যাবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তুষারকান্তি সাহা বলেন, ‘এখন যে সর্দি-কাশি, জ্বর হচ্ছে, তার কারণ হতেও পারে কোভিড-১৯, আবার নাও হতে পারে। তবে, কোভিড-১৯ এখন এতটাই সাধারণ পর্যায়ে চলে এসেছে যে আগের মতো আর টেস্ট করাচ্ছেন না মানুষ।’
এদিকে, গত ২৮ জানুয়ারি আপাতত শেষ প্রকাশিত এই বুলেটিন অনুযায়ী, এই রাজ্যে তার আগের ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ, গত ২৭ জানুয়ারি ১,৪৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র ছ’ জন কোভিড-১৯ আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। রাজ্যে ওই দিনের কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার ছিল ০.৪২ শতাংশ। ওই দিন এ রাজ্যে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে আর প্রকাশ করা হচ্ছে না এই বুলেটিন। কেন? এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ এখন অনেক কমে গিয়েছে। তাই আপাতত এই বুলেটিন আর প্রকাশ করা হবে না।’
চিকিৎসক তুষারকান্তি সাহা এমনই বলেন, ‘ভারতে এখন কোভিড-১৯-এ দৈনিক ১০০-১৫০ জনের মতো আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই সংখ্যাটা হয়তো বেশি আছে। কিন্তু, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও কোভিড-১৯ এখন সাধারণ সর্দি-কাশির আকার নিয়েছে।
এই কারণে, কোভিড-১৯ হলে টেস্ট করাতে হবে, কয়েক দিন বাইরে বের হওয়া যাবে না, এই বিষয়টি মানুষের কাছে আগের মতো আর নেই। এর ফলে, প্রকৃত তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘এই অবস্থায় কোন তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরিসংখ্যান দেবে সরকার। এই কারণেই সম্ভবত বুলেটিন আপাতত আর প্রকাশ করা হচ্ছে না।’