পারিজাত মোল্লা: সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের কাছে কলকাতা হাইকোর্ট যেন এক বিশ্বাসের কেন্দ্রস্থল। সূদুর আসাম থেকে এক পরিবার এসেছে তাদের সন্তানের রহস্য মৃত্যুতে দায়ীদের শাস্তি দিতে।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে উঠে খড়গপুর আইআইটি কলেজে পড়ুয়া ফয়জান আহমেদের রহস্য মৃত্যু মামলা। এদিন আইআইটির ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় আইআইটির ডিরেক্টরকে তীব্র ভৎর্সনা হাইকোর্টের।
বিচারপতি মান্থার এদিন প্রশ্ন করেন, ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় আদৌ কোনও অনুভূতি আছে? নিজের সন্তান হলে কেমন মনে হত?’ এর পাশাপাশি বিচারপতি আরও জানান, ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা ঘটলে তার দায়বদ্ধতা ডিরেক্টরের উপর বর্তাবে’।
আদালত সূত্রে প্রকাশ, গত ১৪ অক্টোবরে খড়্গপুর আইআইটির হোস্টেল থেকে উদ্ধার হয়েছিল অসমের বাসিন্দা ফয়জান আহমেদের ঝুলন্ত দেহ।
প্রথমে আত্মহত্যা বলা হলেও পরে মৃত ছাত্রের পরিবার অভিযোগ করে, ফাইজানকে খুন করা হয়েছে। সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা তীব্র ভর্ত্সনা করলেন খড়্গপুর আইআইটির ডিরেক্টর বীরেন্দ্র তিওয়ারিকে।
এদিন আদালত জানায়, ছাত্র মানে তো সন্তানসম। একজন ছাত্রের এভাবে মৃত্যু হয়েছে। আর তার তদন্তে এত অবহেলা?’
ডিরেক্টরের আইনজীবী জানান, ঘটনার পরে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির গড়া হয়েছে। তারপরে তদন্ত করে শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটি রিপোর্ট দেয়। এরপরে আরও একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়’।
আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি মান্থার বলেন, ‘আপনার ডিরেক্টর কেন বুঝতে পারছেন না, একটা ছেলের এমন মৃত্যু আর সেখানে কর্তৃপক্ষে বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে! আপনার ছেলে মেয়ে আছে? তাহলে আপনি তাদের কথা ভাবুন, বুঝতে পারবেন ওই বাবা মায়ের কান্না। যাঁরা পয়সার অভাবে গুয়াহাটি থেকে আসতে পারছেন না।’
আদালত এও প্রশ্ন তোলে, -‘ডিরেক্টরের কাছে কোনটা জরুরি, আগে কোর্টের তলব, না কি টোকিও যাওয়া?’বিচারপতি মান্থার প্রশ্ন তোলেন, ‘র্যাগিংয়ের মতো ঘটনা এত হালকা ভাবে কেন নিচ্ছেন ডিরেক্টর? এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ওইদিন পুলিশের কেস ডায়েরি পেশ করতে হবে।
আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি খড়্গপুর আইআইটিকে জানাতে হবে,-‘ তদন্ত করে কী পেল তারা’।
খড়গপুর আইআইটির বি.টেক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়জান আহমেদ। গত ১৪ অক্টোবর আইআইটি-র হস্টেলের ঘর থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। প্রথম থেকেই ফয়জানের পরিবারের অভিযোগ, তাদের ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে।