পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : ‘বিনা যুদ্ধে নাহি সূচ্যগ্র মেদিনী।’ উত্তর পূর্বের বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্য দখলে মূলত এমন নীতিই নিয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছে বাংলার শাসকদল। নিয়মিতভাবে বাংলা থেকে ত্রিপুরায় পাঠানো হচ্ছে একের পর এক সাংসদ-মন্ত্রীকে। শুক্রবারই দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ওই রাজ্যে হাজির হয়েছেন তৃণমূলের আট সাংসদ ও শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেই সঙ্গে গিয়েছেন প্রয়াত আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামীর কন্যা বসুন্ধরা গোস্বামী। এমন সিদ্ধান্তের পিছনে মূলত দুই কৌশল রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। প্রথমত, ত্রিপুরার পুলিশ-প্রশাসনের উপরে চাপ তৈরি, দ্বিতীয়ত, ওই রাজ্যের তৃণমূল কর্মীদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া দল পাশে রয়েছে।
তবে হাত গুটিয়ে বসে নেই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে দিল্লিতে জরুরি তলব করেছেন অশমিত শাহ ও জেপি নাড্ডা। ওই বৈঠকেই ঠিক হয়েছে ত্রিপুরার রাশ যাতে কোনও ভাবেই হাতছাড়া না হয় তা নিশ্চিত করতে শিগগিরই ওই রাজ্যে যাচ্ছেন বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা। প্রয়োজনে ওই রাজ্যে মন্ত্রিসভায়ও সম্প্রসারণ করে দলের অন্দরের মধ্যে অসন্তোষ চাপা দেওয়ার পথেও হাঁটতে পারেন তাঁরা।
গত কয়েকদিন ধরেই তৃণমূল ও বিজেপির রাজনৈতিক সঙ্ঘাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ত্রিপুরার রাজনীতি। ঘাসফুল শিবিরের আগ্রাসী মনোভাবে কিছুটা হলেও রক্তচাপ বেড়েছে উত্তর-পূর্বের বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের। যার প্রতিফলনও দেখা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ত্রিপুরা পুলিশের পক্ষ থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলের ছয় নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তৃণমূল করার অপরাধে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ফলে অনেকটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উত্তর পূর্বের বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্যের তৃণমূল কর্মীরা।
দলীয় কর্মীদের উপরে ত্রিপুরা পুলিশের এমন নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই পাল্টা রণকৌশল নিয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। আগামী ১৬ অগস্ট উত্তর-পূর্ব রাজ্যে ‘খেলা হবে’ কর্মসূচি পালনে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সব সাংসদকে ওই রাজ্যে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একসঙ্গে তৃণমূলের একাধিক সাংসদ হাজির হওয়ার ফলে বিপ্লব দেব প্রশাসনের উপরে অনেকটাই চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক।
ত্রিপুরায় বিজেপিকে চাপে ফেলতে ইতিমধ্যেই বামেদের কাছে পেতে উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই সঙ্গে ত্রিপুরার মহারাজা তথা প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মনের ত্রিপাকেও পাশে পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। যদি প্রদ্যোৎ কিশোরকে কাছে পাওয়া যায় তাহলে উত্তর-পূর্বের রাজ্যের বাসিন্দা আদিবাসী ও উপজাতিদের সমর্থন পাওয়ার একটা সুযোগ থাকবে।