পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ বরাবরই সংবাদ মাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কেননা যেভাবে তিনি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় একের পর এক নজিরবিহীন নির্দেশ জারি করেছেন তাতে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের কাছে তিনি দেবদূত। সোমবার এক মামলাকারীর উদ্দেশে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি বদলে গিয়েছি। আগের মতো নেই। ভগবান থেকে শয়তান হয়ে গিয়েছি’।
সাধারণত কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে কোনও শুনানি থাকলে এখন এমনিতেই ভিড় হয়ে যায়। আইনজীবী, সাংবাদিক থেকে সাধারণ মানুষের ভিড় লেগেই থাকে । অন্য মামলার সঙ্গে জড়িত আইনজীবীরাও অনেকে এসে বসে থাকেন বিচারপতি নতুন কী বলছেন তা শোনার জন্য। এদিন প্রাথমিক নিয়োগ নিয়ে মামলার শুনানি চলছিল। শুনানি চলাকালীন এক মহিলা সামনের দিকে এগিয়ে আসেন। তারপর বলেন, ‘ধর্মাবতার আমার কথা একটু শুনুন। আপনিই ভরসা।’বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে বলেন, ‘এখন তো মামলা মেনশনের সময় নেই। তাছাড়া এভাবে বলছেন কেন? এভাবে কি মামলা করা যায়?’ এর জবাবে ওই মহিলা বলেন, ‘আমি প্রাথমিক স্কুলে চাকরি প্রার্থী। যোগ্যতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও বঞ্চিত হয়ে অনেক বছর ধরে ঘুরছি। কয়েক বার আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলাম। সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে তা করতে পারিনি। এর আগে মামলা করেও কিছু হয়নি। আপনি সাহায্য করুন। আপনাকে আমরা ভগবানের মতো দেখি’।
এ কথা শুনেই বিচারপতি অভির্জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি তো আর আগের মতো নেই। আমি ভগবান-টগবান নই। আমি শয়তান হয়ে গেছি। ভগবান থেকে শয়তান’। মহিলা তখন বলেন, ‘ধর্মাবতার এ ভাবে বলবেন না প্লিজ। আপনি দেশের জন্য যা করছেন তা অতুলনীয়। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ’। এত কিছুর পর শেষে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে বলেন, ‘ঠিক আছে আপনার মামলার নম্বর কত? দিয়ে যান। বুধবার বিষয়টি দেখতে পারি’। এজলাস ছেড়ে বেরোনোর সময়ে ওই মহিলা পা পিছলে পড়ে যান। কয়েকজন আইনজীবী তাঁকে তুলে ধরেন। মহিলা তখন বলেন, ‘আমার মাথা ঘুরে গিয়েছিল।’
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ও এ ঘটনায় বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আপনি সাবধানে যান। মামলার শুনানি হবে। চিন্তা করবেন না। এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ওই মহিলার কাছে তাঁর মামলার নম্বর জানতে চান। তিনি বলেন, মামলার নম্বর দিয়ে যান, বুধবার বিষয়টি দেখতে পারি। একথা শোনার পর এজলাস ছেড়ে বেরতে যান ওই মহিলা। সেই সময় পা পিছলে পড়ে যান তিনি। কয়েক জন আইনজীবী এসে তাঁকে ধরেন। ওই মহিলা জানান, তাঁর মাথা ঘুরে গিয়েছিল। সেই কারণেই তিনি পড়ে গিয়েছিলেন। এর পর ধীরে ধীরে এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি।