পুবের কলম প্রতিবেদক: শনিবার কলকাতার উর্দু অ্যাকাডেমির অডিটোরিয়ামে ‘ইনস্টিটিউট অফ অবজেকটিভ স্টাডিজ’ কলকাতা শাখা অ্যাকাডেমিক কনট্রিবিউশন এন্ড লিগাসি অফ প্রফেসর ড. এমকেএ সিদ্দিকি’র বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান ও তাঁর উত্তরাধিকার শীর্ষক এর স্মরণসভা ও সেমিনারের আয়োজন করে।
এদিনের সেমিনারে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, পুবের কলম-এর সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, ড. আলিফিয়া তুন্ডাওয়ালা, ড. সরফরাজ আহমেদ খান, নিসার আহমেদ, প্রেসিডেন্সির অধ্যাপক সাজ্জাদ আলম রিজভি, যুবায়ের হোসেন, আবদুল বাসিত ইসমাইল প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জনাব মুহাম্মদ শাহজাহান।
এদিনের সভায় আহমদ হাসান ইমরান এমকেএ সিদ্দিকির অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি ‘সবসময় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক ভালো করার লক্ষ্যে বই ও পুস্তিকা লিখেছেন। অ্যানথ্রোপলজি নিয়ে কাজ করেছেন। আর নৃবিজ্ঞান যেকোনও সম্প্রদায়ের সমস্যা, সম্ভাবনা ও বিকাশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাধীনতার পর ড. এমকেএ সিদ্দিকি এ বিষয়ে প্রচুর কাজ করেছেন। তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিচিতি ও তাদেরকে তুলে ধরার লক্ষ্যে সবসময় কাজ করে গেছেন। ‘ভারতের আদিবাসি’ একটি অগ্রণী গবেষণাপত্র। হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক ছাড়াও তিনি কলকাতার মুসলিমদের উপর এবং সংখ্যালঘুদের শিক্ষার উন্নতির জন্য বই-পত্র লেখা ছাড়াও অনেক কাজ করেছেন। বস্তি উন্নয়ন এবং বস্তিবাসীদের পেশা নিয়েও তাঁর কাজ ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি এ প্রসঙ্গে আইওএস-এর সর্বভারতীয় চেয়ারম্যান ড. মনজুর আলম-এর প্রজ্ঞা এবং দূরদৃষ্টির কথাও উল্লেখ করেন। বলেন, যে লক্ষ্যে আইওএস প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তার সঙ্গে আমিও যুক্ত ছিলাম। সেই লক্ষ্য এখন অনেকটাই অর্জিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আইওএস-এর চেয়ারম্যান ড. মনজুর আলমের একটি বার্তা পড়ে শোনানো হয়। ওই বার্তায় ড. আলম বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিশেষ করে যারা সমাজের নিম্নস্তরে অবস্থান করছে, তাদের প্রতি ড. সিদ্দিকির ছিল বিশেষ লক্ষ্য। তিনি ড. সিদ্দিকির সম্পাদিত একটি বইয়ের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, সেটি হচ্ছে পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত ‘অ্যান অ্যানসাইক্লোপেডিক কমপেন্ডিয়াম অফ মুসলিম কমিউনিটিস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’।
সেমিনারে মুসলিমদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা ড. আলিফিয়া তুন্ডাওয়ালা। তাঁর কথায়, গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা ‘আইডেনটিটি ক্রাইসিস’-এ ভুগছেন। এই সমাজের মানুষরা আর্থিকভাবেও পিছিয়ে রয়েছে। সেই মানুষদের নিয়ে কাজ করতেন এমকেএ সিদ্দিকি সাহেব। তাঁর চলে যাওয়াটা সমাজের বড় ক্ষতি।
ড. আলিফিয়া আরও বলেন, তাঁর সঙ্গে আলোচনায় ড. সিদ্দিকি পরিচিতি বা আইডেনটিটি-র উপর বেশি জোর না দিয়ে বরং ‘বিশ্বজনীন পরিচিতি’র উপর জোর দিতে বলেছিলেন। তিনি মুসলিম বিশেষ করে বাঙালি মুসলিমদের সংকটের কথা উল্লেখ করেন।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন এমকেএ সিদ্দিকি’র জীবনাদর্শ সংক্ষিপ্তভাবে উল্লে’ করে বলেন, তাঁর মৃত্যুতে ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। তবে তাঁর নানাবিধ কর্মকাণ্ড গবেষক-পড়ুয়াদের উৎসাহিত করবে বলে তিনি জানান।
উল্লখ্য, চলতি বছরের ২০ জুলাই ইন্তেকাল করেন ড. এমকেএ সিদ্দিকি। তাঁর জন্ম ১৯২৯ সালে। শিক্ষাব্রতী হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত নৃতত্ববিদ। তিনি ৪০টির বেশি বই লিখেছেন।
তাঁর অন্যতম বইগুলির মধ্যে রয়েছে, মার্জিনাল মুসলিম কমিউনিটিস ইন ইন্ডিয়া, সোশ্যল এন্ড কালচারাল এমপাওয়ারমেন্ট অফ মুসলিমস ইন ইন্ডিয়া, ইন্টার কাস্ট এন্ড ইন্টার কমিউনিটি রিলেশনশিপ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এদিকে ইনস্টিটিউট অফ অবজেকটিভ স্টাডিজের প্রতিষ্ঠা হওয়ার কিছুদিন পর থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এমকেএ সিদ্দিকি এই প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে গিয়েছেন। ১৯৫৩ সালে অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন পুরস্কারের সঙ্গে শাহ ওয়ালিউল্লাহ পুরস্কারও লাভ করেন।