মুহাম্মদ ফিরোজ, সুন্দরবন: অমাবস্যার কোটাল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় ত্রস্ত সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, সাগর গোসাবা কুলতলী বাসন্তী ও নামখানা ব্লকের বাসিন্দারা। বলা যেতে পারে আশঙ্কার আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে সুন্দরবন।
সোমবার সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলেও উপকূলীয় এলাকায় হাওয়ার গতিবেগ ছিল অনেক কম। নদী ও সমুদ্রের জলও ছিল বিপদসীমার অনেকটাই নিচে। এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে। কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই নিচু এলাকা সাগরদ্বীপের ঘোড়ামারা, নামখানার মৌসুনি, ঈশ্বরীপুর, নন্ডভাঙা, পাথরপ্রতিমার জি-প্লটের গোবর্ধনপুর ও কে-প্লট এবং কাকদ্বীপের স্বামী বিবেকানন্দ পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষকে ফ্লাডশেল্টারগুলিতে সরিয়ে আনা হয়েছে। রাতের মধ্যে আরও বেশ কিছু মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হবে বলে তিনি জানান।
বকখালির সমুদ্রসৈকত এদিন ছিল সম্পূর্ণ পর্যটকশুন্য। সুন্দরবনেও পর্যটকদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তিন দিন অর্থাৎ বুধবার পর্যন্ত কোন পর্যটক সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। সমস্ত ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে। হোটেলগুলিও প্রায় ফাঁকা। সমুদ্রস্নানে মঙ্গলবার পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। সেচদফতর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে অস্থায়ী নদী বাঁধ গুলির ওপর। শুকনো খাবার, চাল, ডাল ত্রিপল ও জ্বালানি সহ সমস্ত অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র মজুত রাখা হয়েছে।
সাগর ও ঘোড়ামারায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এদিন বেশ কিছু ত্রিপলও বিলি করা হয়। ডায়মন্ডহারবারের মহকুমাশাসক অঞ্জন ঘোষ জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় ন’টি ব্লক, ডায়মন্ডহারবার পুরসভা এবং এসডিও অফিসে মোট ১১টি কন্ট্রোলরুম চালু রযেছে। ত্রাণসামগ্রী মজুt রাখা ছাড়াও শুকনো খাবারের জন্য বেশ কিছু দোকানকে চিহ্নিত করে রেখেছে ডায়মন্ডহারবার মহকুমা প্রশাসন।যাতে প্রয়োজনে সেই সমস্ত দোকান থেকে শুকনো খাদ্যসামগ্রী দুর্গত মানুষকে সরবরাহ করা দ্রুত সম্ভব হয়। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রায় কুড়িহাজার পানীয় জলের পাউচপ্যাক ডায়মন্ডহারবার মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় মজুত রাখা হয়েছে।
এছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে পানীয় জলের পাউচপ্যাক তৈরি করে সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেশিনও। ডায়মন্ডহারবার মহকুমায় মোট ৩০০ টি ফ্লাডশেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে নিচু এলাকা থেকে প্রয়োজন পড়লে বাসিন্দাদের সরিয়ে এনে রাখার জন্য। মহকুমাশাসক জানান, এজন্য পাঁচটি মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার ছাড়াও হাইস্কুল, প্রাথমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও ক্লাবঘরকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার প্রশাসন সবধরনের আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। রবিবারের প্রশাসনিক বৈঠকের পর সোমবার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজনকে সরানোর কাজ শুরু হয়।। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আলিপুরে জেলার অতিরিক্ত সহসচিব বিবেক কুমার,জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা সহ অ প্রশাসনিক দপ্তরের আধিকারিকরা। কাকদ্বীপ সাগর নামখানা গোসাবা সহ্ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দশ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এজন্য ১৭০০টি শিবির খোলা হয়েছে।সেখানে পর্যাপ্ত জল ও খাদ্যসামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার দুদিন সবধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে।তিনটি এনডিএম দল মোতায়েন থাকছে।৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক সহ সিভিল ডিফেন্স,সেচদপ্তরের সঙ্গে প্রশাসন সমন্ময় রেখে চলেছে।জেলাশাসক জানালেন, প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হবে। গোসাবা,সাগর,নামখানার মতো উপকুলবর্তী উপদ্রুত অঞ্চলে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।আগামী দুদিন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা হবে।ঘন্টায় ৯২ কি:মি বেগে ঘুর্নিঝড় বইতে পারে বলে আবহওয়া দপ্তর থেকে জানান হয়েছে।ফলে জলোচ্ছাসে কাঁচা বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে।সেচ দপ্তরের সঙ্গে সমন্ময় রেখে কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই সুন্দরবনের বিভিন্ন হোটেল খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে। শুধু তাই নয় পর্যটকদের প্রবেশের উপরেও তিন দিন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।