সেখ কুতুবউদ্দিনঃ কেউ দাঁড়িয়ে। কেউ বা বসে। ভিড়ে ঠাসা। সভাগৃহে ছিল না দাঁড়ানোর জায়গা। আর তাতেই যে যাঁর মতো দাঁড়িয়ে বা বসে। একাগ্রতার সঙ্গে উপস্থিত মন্ত্রী ও বিশিষ্টদের মুখে শুনলেন সম্প্রীতির বাণী, মানবতার বার্তা।
রবিবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের নানা ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে এক মহামিলন উৎসবে পরিণত হল নবী দিবসের অনুষ্ঠান। কলকাতার উর্দু অ্যাকাডেমির সভাগৃহে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল যৌথভাবে পুবের কলম, একটি কুসুম ও বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চ।
নবী দিবস স্মরণ উপলক্ষ্যে এদিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে নবী প্রেমী মানুষরা উপস্থিত হন। বিশিষ্টদের বক্তব্য শোনার ফাঁকেই অনুষ্ঠানের উপযোগিতার কথা পুবের কলমের প্রতিবেদককে শোনালেন উপস্থিত বিশিষ্টরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট থেকে এসেছেন নুরুল ইসলাম। জিপিও’র প্রাক্তন অ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর নুরুল সাহেবের কথায়, এই ধরণের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয় না। এখানে এসে সম্প্রীতির বার্তা পেলাম। এই ধরণের প্রোগ্রাম আরও করার পরামর্শ দেন তিনি। হুগলির বাঁশবেড়িয়ার শিউলি চক্রবর্তী এই প্রোগ্রামে এসে খুশি। তাঁর বক্তব্য, না এলে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারতাম না। ভালো লাগছে।
এক ধর্মের মানুষ, অপর ধর্ম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করছে। নবী দিবসের মতো অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা রয়েছে। একে অপরের ধর্ম-সংস্কৃতি আদান-প্রদানের প্রয়োজন।
ডব্লিউবিসিএস অফিসার তানবীর আলি বিশ্বাস অধীর আগ্রহে উপস্থিত বিশিষ্টদের বক্তৃতা শুনছিলেন। তাঁকে প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই, তিনি বলেন, নবী সা. কে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে মুসলিমদের পাশাপাশি অমুসলিমরা নবী সা. সম্পর্কে জানতে পারছেন।
এ দিনের আলোচনার মাধ্যমে মহামিলনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে শিক্ষাব্রতী আবদুল আলিম, শিক্ষক আবদুল ওহাবদের বক্তব্য এটা শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম। এই ধরণের আলোচনা জরুরি। নবী সা. এর আদর্শ অন্যরাও জানতে পারছে।
আরামবাগের হাই মাদ্রাসার শিক্ষক করিম খানের বক্তব্য, প্রয়োজন আছে, প্রচুর শ্রোতা এসেছেন। খুব ভালো প্রোগ্রাম, আগামীতে আরও বড় জায়গায় করার পরামর্শ দেন তিনি।
রিঙ্কু চৌধুরি বলেন, নবী দিবসের বিশ্লেষণমূলক ভাষণের মাধ্যমে জাতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হল। নবী সা. এর জন্ম মাসে এই ধরণের প্রোগ্রামে উপস্থিত হতে পেরে আমি একজন বৌদ্ধ ধর্মের মহিলা হয়ে গর্ব অনুভব করছি। এম এন শোভাহান, আলিয়ার ছাত্র সাজিদুর রহমানদের বক্তব্য, এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে ভালো লাগছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ হওয়ার বার্তা তুলে ধরা হয়েছে। এতে সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি হবে। তাই এই আলোচনা চক্র প্রাসঙ্গিক।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রাক্তন সরকারি আধিকারিক আরফান আলি বিশ্বাস, সমাজসেবী আবু সালেহ মুহাম্মদ রেজওয়ানুল করিম, আবু সিদ্দিক খান ডা. প্রকাশ মল্লিক, একেএম ফারহাদ, তথ্যচিত্র নির্মাতা মুজিবর রহমান সহ উপস্থিত বিশিষ্টরা বলেন, আগে থেকেই এদিনের প্রোগ্রামের আসার প্রস্তুতি ছিল। এই প্রোগ্রামে এসে আমরা গর্বিত।
নবী সা. কে নিয়ে আরও আলোচনাচক্রের প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রোগ্রামে উপস্থিত বিশিষ্টরা ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষ সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে গেলেন। এদিন হাজি কুতুবউদ্দিনের দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।