পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: ভারতীয় সংস্কূতিতে বিয়ে ও বৈবাহিক সম্পর্ককে পবিত্রতার চোখে দেখা হয়। এটা কোনও ফেল না নয়। পাশ্চাত্যের সংস্কূতির মতো এখানে আজ বিয়ে কাল বিচ্ছেদ চলতে পারে না। একটি বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট।
বিয়ে টিকিয়ে রাখতে স্ত্রীর করা আবেদনটির এ দিন শুনানি চলছিল আদালতে। স্বামীর বক্তব্য ছিল, বিয়ে এখন তিক্ত হয়ে উঠেছে। তাই বিচ্ছেদ বাঞ্ছনীয়। তিনি চান তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে। কিন্তু তাতে তাঁর স্ত্রীর প্রবল আপত্তি। স্ত্রী চাইছেন তিনিও যেন কানাডায় চলে আসেন। স্ত্রী পালটা বলেন, বিয়ে ভেঙে যাক তিনি চান না। তিনি কানাডায় কর্মরত ছিলেন। শুধুমাত্র তাঁর স্বামীর জন্য করোনার সময়ও ভারতে এসেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট তখন স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, তিনি কানাডায় বসবাসকারী একজনকে বিয়ে করেছেন। আর এখন তাঁকে সেখান থেকে সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে এখানে চলে আসার জন্য জোর করছেন। তাঁদের উভয়ের উচিত নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়া। প্রয়োজনে মধ্যস্থতাকারীর পরামর্শ নেওয়া। কাউন্সেলিং করানো।
সুপ্রিম কোর্ট এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা এই মামলায় ১৪২ ধারার অধীনে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে না, যখন স্ত্রী এই বিয়েকে টিকিয়ে রাখতে আরও একবার চেষ্টা করতে ইচ্ছুক। যদিও স্বামী দাবি করেছেন, তাঁদের সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছে।
বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কউল ও বিচারপতি অভয় ওকার বেঞ্চকে জানানো হয়েছিল যে, ওই দম্পতি বিয়ের পর মাত্র ৪০ দিনের জন্য একসঙ্গে এক ছাদের নীচে ছিলেন। তারপর থেকে এখন প্রায় ২ বছর আলাদাভাবে বসবাস করছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ভারতে বিবাহ কোনও নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা নয়। আমরা বিবাহকে ‘আজ বিয়ে, কাল ডিভোর্স’-এর মতো পশ্চিমা মানদণ্ডে নিয়ে যেতে পারেনি। এরপরই স্বামীর বিয়ে বাতিলের আবেদন খারিজ করে দিয়ে শীর্ষ আদালত কার্যত তার রায় ঘোষণা করে জানিয়ে দেয়, ১৪২ ধারার অধীনে থাকা ক্ষমতাগুলি বিয়ে বাতিলের জন্য প্রয়োগ করা যাবে না, যখন একটি পক্ষ বিয়ে টিকিয়ে রাখতে ইচ্ছুক।
বিচারপতিদের বেঞ্চের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই উচ্চশিক্ষিত। স্বামী একটি এনজিও চালান। স্ত্রী কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। যেহেতু তাঁরা দু’জনেই উচ্চশিক্ষিত তাই বিয়ে না ভেঙে তাঁদের উচিত দাম্পত্য সমস্যাগুলির সমাধানের চেষ্টা করা। বেঞ্চের তরফে আরও বলা হয়েছে, এটি এমন একটা মামলা যেখানে ১৪২ ধারা প্রয়োগ করা যুক্তিযুক্ত নয়।
তাছাড়া এটাও বলা খুব কঠিন যে, বিয়ে সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে, যতক্ষণ না স্বামী-স্ত্রী দু’পক্ষই বলছেন তাঁরা এই বিয়ে আর টিকিয়ে রাখতে চান না। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ, দম্পতির উচিত মধ্যস্থতাকারী পক্ষের সাহায্য নেওয়া। সেইমতো পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রাক্তন এক বিচারপতিকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিযুক্ত করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তাঁকে ওই দম্পতিকে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে বলার পাশাপাশি ৩ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।