পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: বাড়িতে হোক কিংবা বাইরে এক ছাত্রীর হিজাব পরার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা যায় না। হিজাব মামলায় খণ্ডিত রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এই মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার হিজাব মামলার খণ্ডিত রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তা এবং বিচারপতি সুধাংশ ধুলিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তা হিজাব নিষিদ্ধ করার পক্ষে রায় দিয়েছেন, কিন্তু বিচারপতি ধুলিয়া মুসলিম ছাত্রীদের স্কুলে হিজাব পরার অধিকারকে মান্যতা দিয়েছেন।
বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, স্কুলের গেটে এসে ছাত্রীরা হিজাব পরার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন না। ছাত্রীরা যখন স্কুলে এবং ক্লাসে প্রবেশ করেন তখনও তিনি মর্যাদা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার ভোগ করে থাকেন। তিনি সেই সময়ও তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন না। বিচারপতি ধুলিয়া কর্নাটক হাইকোর্টের রায় খারিজ করে দিয়ে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার অধিকার বহাল রেখেছেন তার রায়ে।
বিচারপতি ধুলিয়া তার রায়ে লিখেছেন আবেদনকারী ছাত্রীরা চেয়েছেন হিজাব পরার অধিকার ফিরে পেতে। একটি গণতন্ত্রে এটা কি অনেক বেশি কিছু চাওয়া? এটা কীভাবে ‘পাবলিক অর্ডার’কে প্রভাবিত করবে? কীভাবে এটি সংবিধানের তৃতীয় খণ্ডে বর্ণিত স্বাস্থ্য রুচিশীলতাকে প্রভাবিত করবে? কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ে এইসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি।
বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, কর্নাটকের কোনও স্কুল-কলেজে হিজাব পরার উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। হিজাব পরা ইসলাম ধর্মের অত্যাবশকীয় বিধান হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু তবুও বিষয়টা অভিব্যক্তি প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমান মামলার ক্ষেত্রে আমাদের বহুত্ববাদ, আমাদের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের নীতি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রি ইউনিভার্সিটি কলেজগুলিতে ছাত্রছাত্রীরা সর্বপ্রথম অবকাশ পায় দেশের এই বৈচিত্র্যের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার। তাদের বোঝাতে হবে, তবেই তারা আমাদের সহনশীলতা, বহুত্ববাদ, আমাদের পোশাক এবং খাদ্যাভাসের বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানতে পারবে। তখনই অন্য সম্প্রদায় এবং ধর্মের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা জাগবে।
তারা বুঝতে পারবে এই বৈচিত্র্যই আমাদের শক্তি সংহতি আমাদের দেশের ঐতিহ্য। একটি ছাত্রীর পক্ষে স্কুল গেট পর্যন্ত আসা খুব সহজ বিষয় নয় আমাদের সমাজে। তাই তারা যখন স্কুলে আসে তাদের স্বাগত জানাতে হবে। তাদের শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। দেখতে হবে সে শুধু হিজাব পরছে বলে সে যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়।
বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, এ দেশে সবচেয়ে মনোরম দৃশ্য হচ্ছে সকালবেলা একটি মেয়ে কাঁধে ঝোলা নিয়ে স্কুলে পথে এগিয়ে চলেছে, সেটি দেখা। তারাই আমাদের আশা, আমাদের ভবিষ্যৎ তবে এটাও ঠিক মেয়েদের শিক্ষালাভের পথে বহু বাধা আসে। গ্রাম এবং মফস্সলে মেয়েদের বাড়ির কাজ সেরে পড়তে আসতে হয়। সেই মেয়ের শিক্ষার পথে হিজাবের নামে আমরা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারি না।