পুবের কলম প্রতিবেদকঃ বেকার যুবকদের আমেরিকায় চাকরি পাইয়ে দেওয়া হবে। মূলত এই টোপ দিয়ে হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের ১৮ জন যুবককে কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। যুবকদের হাতের কব্জায় এনেই শুরু হয় দুষ্কৃতী ছক। কলেজ পড়ুয়া সহ ভিন রাজ্যের ওই যুবক দলকে অপহরণ হতে হল দুষ্কৃতীদের হাতে। অপহরণকারীরা শহরে বসে আমেরিকার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে আটক যুবকদের পরিবারের থেকে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপনের দাবি জানান। এই মর্মে সাড়া দিয়ে কয়েকটি পরিবার বেশ কিছু টাকাও দেয় দুষ্কৃতীদলকে।
যদিও সেই টাকা হাতে পাওয়ার পর অপহরণকারীদের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। তাতে রাজি না হয়ে শেষমেষ যুবকদের পরিবার এ শহরের পুলিশের দ্বারস্থ হন। বিষয়টি জানিয়ে বিধানননগর পুলিশ কমিশনারেটের এনএসসিবিআই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ভিন রাজ্যের অপহৃত পরিবার-পরিজনেরা। অভাবনীয় ওই অভিযোগ হাতে পেয়েই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। তদন্ত শুরু করে অপরাধ ঘটনায় জড়িত ৩ দুষ্কৃতী গ্রেপ্তার হয়। ধৃতেরা হল সুরেশ সিনহা, রাকেশ প্রসাদ সিনহা, ধীরাজ দাস। একইসঙ্গে নিখোঁজ ভিন রাজ্যের ১৮ জন যুবককে উদ্ধার করেছে বিধাননগর পুলিশ। বড়সড়ো এই অপহরণের ঘটনার কিনারা করেই রবিবার সকাল সকাল এনএসসিবিআই থানায় সাংবাদিক বৈঠক করে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান বিশ্বজিৎ ঘোষ। এই পুলিশকর্তা আরও জানান, ভিন রাজ্যের ১৮ জন যুবকের অপহরণের পিছনে বড়সড়ো একটি চক্র কাজ করছে। তাদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, চলতি মাসের ১৬ তারিখে হরিয়ানার বাসিন্দা নরেশ কুমার এনএসসিবিআই থানায় অভিযোগ জানান যে, তাঁর ছেলে রাহুল কুমার আগস্ট মাসের ২৮ তারিখ থেকে নিখোঁজ হয়েছে। তিনি জানতে পেরেছেন রাহুল কলকাতায় দুষ্কৃতীদের হাতে আটকে রয়েছে। ছেলেকে উদ্ধার করতে এনএসসিবিআই থানার পুলিশের কাছে ইমেল মারফত অভিযোগ করেন।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ দমদম ও এয়ারপোর্ট সংলগ্ন জায়গা থেকে অভিযুক্তদের পাকড়াও করে। সেইসঙ্গে রবিবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দর অঞ্চল থেকে নিখোঁজ ১৮ জন যুবককে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনা তদন্ত নেবে প্রাথমিকভাবে পুলিশের দাবি, আমেরিকায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে যুবকদের কলকাতায় আনা হয়েছিল। এরপর বিমানবন্দর লাগোয়া দুটি হোটেলে তাদের তিন দিন আটকে রেখে, যুবকদের পরিবারকে মোটা টাকার মুক্তিপনের দাবি জানায় অপহরণকারীরা। এদিকে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ হোটেল দুটির নাম গোপন রেখেছে।
পুলিশের একটি সূত্রে খবর, বিমানবন্দর লাগোয়া হোটেল থেকে ওই ১৮ জন যুবককে একটা সময়ে নিয়ে যাওয়া হয় নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া ২-এর ইকো আরবান ভিলেজের কাছাকাছি বহুতল একটি আবাসনে। সেখানে এক চিকিৎসকের ফ্ল্যাটে যুবকদের আটকে রেখে পরিবারের থেকে ধাপে ধাপে টাকা আদায় করে দুষ্কৃতীরা। সেই অংশে রাহুলের পরিবারের কাছে ৪৯ লক্ষ টাকা দাবি যায়। এরমধ্যে রাহুলের বাবা ৪০লক্ষ টাকা দেন অপহরণকারীদের। সেইসঙ্গে তিনি জানতে পারেন তাদের ছেলে আমেরিকায় নয় কলকাতায় রয়েছে। এরপরে সেই ছেলেকে উদ্ধার করতে পুলিশের দ্বারস্থ হন রাহুলের বাবা নরেনবাবু।