নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষক নিয়োগ থেকে কয়লা ও গরু পাচারকাণ্ডে ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অতি সক্রিয়তা নিয়ে সোমবার রাজ্য বিধানসভায় পাশ হল নিন্দা প্রস্তাব। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ১৮৯ জন বিধায়ক। প্রস্তাবের বিরোধিতায় ভোট দিয়েছেন বিজেপির ৬৪ বিধায়ক। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহার নিয়ে একাধিক বিজেপি বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা সরব হলেও এই প্রথম কোনও রাজ্য বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব পাশ হল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে মোদি সরকারের দুই সংস্থার যে অঘোষিত লড়াই চলছে, এদিনের নিন্দা প্রস্তাব পাশের পরে তা আরও তীব্র হবে।
গত বছর বিধানসভা ভোটে বিজেপির নবান্ন দখলের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ার পরেই রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি কলুষিত করতে মোদি সরকার ইডি এবং সিবিআইয়ের মতো বিশ্বাসযোগ্যহীন হয়ে ওঠা দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে আসরে নামিয়েছে বলে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব সরব। গরু পাচার ও কয়লা পাচার কাণ্ডে অনুব্রত মন্ডলকে গ্রেফতার, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সস্ত্রীক একাধিকবার তলব, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়িতে সিবিআইয়ের হানার ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলেই মনে করছেন তাঁরা। দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে এদিন বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব পেশ করেন তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ ও তাপস রায়। ওই প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির দ্বৈরথ তুঙ্গে উঠেছিল।
বিতর্কে অংশ নিয়ে ইডি ও সিবিআইয়ের অতি সক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে সেই সঙ্গে স্পষ্ট করে দেন ইডি-সিবিআইয়ের তদন্তের অন্ধ বিরোধিতা করছেন না তিনি। মমতার কথায়, আমি ইডি-সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু ওদের নিরপেক্ষ হতে বলব।’
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যে শাসন চলছে তা মুসোলিনি-হিটলার-স্ট্যালিন শাসনকালের চেয়েও ভয়ঙ্কর।’
ইডি ও সিবিআইয়ের অতি সক্রিয়তা নিয়ে সুকৌশলেই বিজেপির অন্দরে ভাল-খারাপের বিভাজন রেখা টানতে চেয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যে ইডি-সিবিআইয়ের উপরে আর নিয়ন্ত্রণ নেই, তা উল্লেখ করে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘এখন সিবিআই আর প্রধানমন্ত্রীর দফতরের হাতে নেই। আমি বিশ্বাস করি না যে প্রধানমন্ত্রী এটা করেছেন। কেননা, সিবিআই এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন।’
রাজ্যে ইডি-সিবিআইয়ের অতি সক্রিয়তার পিছনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপি নেতাদের একাংশের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে মমতা বলেন, কলকাতায় ২১টা ইডি রেড হয়েছে। এক মাসে ১০৮টা কেস করেছে সিবিআই, ইডি। মধ্যরাতে সরকারকে না জানিয়ে নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িতে চলে যাচ্ছে, হানা দিচ্ছে। বিধানসভা ভোটে হারার পরেই এই প্রবণতা শুরু হয়েছে। বিজেপির বেশ কয়েকজন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতা এটা করছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখে এটা করা হচ্ছে।’ এর পরেই হুঙ্কার ছেড়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা বুনো ওল হলে আমি বাঁঘা তেতুল!’
বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘গেরুয়াধারীদের বাড়িতেও সিবিআই-ইডিকে দিয়ে রেড করালে টাকা-ডলারের পাহাড় উদ্ধার হবে। কার কয়টা লঞ্চ রয়েছে, কয়টা পেট্রল পাম্প রয়েছে-সব আমাদের জানা। আমাদের নিয়ে যদি ইডি-সিবিআই তল্লাশি চালায়, তাহলে অনেক কিছু উদ্ধার হবে। অনেক চোর আজ গেরুয়া সেজে বসেছেন। দেখে নেবে বলছে! যারা গ্যাস বেলুনের মতো ফুলেছ, শেষ হয়ে যাবে। তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ…। তৃণমূলে থাকলে চোর আর বিজেপিতে গেলে ওয়াশিং মেশিন!’
রাজ্য সরকারের আনা নিন্দা প্রস্তাবের সমালোচনায় এদিন সরব হয়েছিলেন বিজেপি বিধায়করা। বিরোধী শিবিরের বিধায়কদের সেই সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা প্রস্তাব সরকার আনতেই পারে। এটা ক্রীতদাসদের সরকার নয়! এটা স্বাধীনচেতা সরকার। সিবিআই ও ইডিতে নিরপেক্ষতা আনতেই এই প্রস্তাব আনা হয়েছে।’