I
বিশেষ প্রতিবেদন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যাওয়ার পর ব্রিটেনের রাজা হয়েছেন তাঁর ছেলে তৃতীয় চার্লস। স্বভাবতই চার্লসের প্রতি বিশ্বের আগ্রহ বেড়েছে। রাজনীতি, কূটনীতি, ধর্ম সম্পর্কে তার অবস্থান কী তা জানার চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ব্রিটিশ রাজা চার্লস সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বিশেষত ইসলামের প্রতি তাঁর মনোভাব ইতিবাচক। রাজা চার্লস মনে করেন, পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, পাশ্চাত্য যেভাবে মনে করে চরমপন্থা কেবল মুসলমানদের সাথেই জড়িত, বিষয়টি সেরকম নয় বরং সব ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় রাসূলকে (সা.) ব্যঙ্গ করে আঁকা কার্টুনেরও বিরোধিতা করেন। বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে চার্লস ইসলাম সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন এবং খোলাখুলিভাবে ইসলাম ধর্মের প্রশংসা করেছেন। চার্লস বিশ্বাস করেন, দীর্ঘকাল ধরে পশ্চিমে ইসলাম সম্পর্কে প্রচুর ‘ভুল বোঝাবুঝি’ রয়ে গেছে। ১৯৯৩ সালে অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজে একটি ভাষণের সময় বলেছিলেন, ‘ইসলামের প্রকৃতি সম্পর্কে পশ্চিমে অনেক ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। বিষয়টি আমরা উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছি।’ সে সময় চার্লস সতর্ক করে বলেছিলেন, চরমপন্থাকে ইসলামের একটি পরিচয় হিসাবে দেখা উচিত নয়। বরং খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মেও চরমপন্থা বেশ ভালোভাবে জেঁকে বসে আছে। লেখক রবার্ট জবসন তার ‘চার্লস অ্যাট সেভেন্টি: থটস, হোপস অ্যান্ড ড্রিমস’ বইতে উল্লেখ করেছেন, ব্রিটেনের নতুন এই রাজা ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন অধ্যয়ন করেন এবং মুসলিম নেতাদের কাছে লেখা চিঠিতে আরবিতে স্বাক্ষর করেন। ২০০৫ সালে রাসূল সা.কে উপহাস করে আঁকা ড্যানিশ কার্টুনের সমালোচনা করেছিলেন চার্লস। ২০০৬ সালে মিশরের কায়রোতে আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সফরের সময় তিনি এর নিন্দা জানিয়ে সবাইকে অন্যের বিশ্বাসকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, অন্যদের কাছে যা মূল্যবান ও পবিত্র, তার সম্মানের ব্যর্থতা বড় বিপদ তৈরি করে। চার্লস বলেন, ‘সংখ্যালঘু এবং অপরিচিতদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাই হল একটি সভ্য সমাজের প্রকৃত চিহ্ন। ড্যানিশ কার্টুন নিয়ে ভয়ঙ্কর বিবাদ এবং ক্ষোভ আমাদের অন্যদের কথা শোনার ও অন্যদের কাছে যা মূল্যবান এবং পবিত্র তা সম্মান করতে ব্যর্থতার বিপদটি দেখিয়ে দিয়েছে।’ বাক স্বাধীনতার নামে চিত্রিত এসব কার্টুন পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিম বিদ্বেষ এবং বাকস্বাধীনতার সীমা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। গত এপ্রিলে পবিত্র রমযান মাসের শুরুতে চার্লস সবাইকে ‘রমযানের চেতনা’ থেকে শেখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের হৃদয়ের উদারতা এবং সদয় হৃদয়ের আতিথেয়তা আমাকে বিস্মিত করে না। আমি নিশ্চিত আমরা যখন আরও অনিশ্চিত সময়ে প্রবেশ করব, মুসলিম সম্প্রদায়ের রমযান মাসে দেওয়া অর্থ তখন বিশাল দাতব্যের উৎস হবে।’ রাজা তৃতীয় চার্লস কয়েক দশক ধরে পরিবেশগত বিভিন্ন সমস্যার বিষয়েও একজন স্পষ্টবাদী বক্তা। জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলার বিষয়ে অবিলম্বে এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খোঁজার জন্য আহ্বান জানিয়ে এসেছেন তিনি।