আবদুল ওদুদঃ করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে গত দু’বছর পর এ বছর হজ সম্পন্ন হয়েছে। হজ সর্ম্পূণ করে গত বুধবার গভীর রাতে ৩৭৭ জন হাজী কলকাতায় ফিরেছেন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ একটি অন্যতম ফরজ ইবাদাত। আর এই ইবাদাত সম্পূর্ণ করতে পেরে খুশি পবিত্র ভূমি থেকে হজ সম্পূর্ণ করে ফিরে আসা হাজীরা। দুবছর এ রাজ্য থেকে কোনও ব্যক্তি হজ সম্পূর্ণ করতে যেতে পারেনি। কাজেই এ বছর হাজী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কিছুটা হলেও উৎসাহ ছিলই। আর এই উৎসাহ দেখা গেল বুধবার গভীর রাতেই।
রাত ১১.৩০ মিনিটের পর এসভি ৫৩৫০ সউদি এয়ারলাইন্সের বিশাল আকারের বিমানটি কলকাতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর হাজী ও হাজ্জিনদের বাসে করে নিয়ে ইমিগ্রেশনের জন্য নিয়ে আসা হয়। এই সমস্ত হাজীদের ইমিগ্রেশন এবং লাগেজ সংগ্রহ প্রক্রিয়া শেষ করতে রাত ২টো পর্যন্ত চলে। এরপর হাজীরা তাঁদের পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে শুরু করেন।
দুবছর পর হজ সম্পূর্ণ করার সুযোগ পেয়ে নিজেদের আবেগ চেপে রাখতে পারেননি প্রথম উড়ানে আসা হাজীদের বেশ কয়েকজন। মেটিয়াবুরুজ এলাকা থেকে এবাদুল্লাহ মোল্লা স্ত্রী জাহানারা বিবিকে নিয়ে পবিত্র হজ সম্পূর্ণ করে ফিরেছেন। ‘সোনার মক্কা ও মদিনা’ থেকে ফিরে নিজের আবেগ চেপে রাখতে পারেননি। তিনি কেঁদে ফেলেন।
‘পুবের কলম’কে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন,গতকয়েক বছর ধরেই হজ সম্পূর্ণ করা ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। কিন্তু করোনার কারণে যেতে পারেননি। এ বছর আল্লাহর রহমতেই হজ সম্পূর্ণ করতে পেরেছেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করতে পেরে হাজার হাজার শুকরিয়া।’ মদিনা যখন ছাড়ছেন তখনও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, সমস্ত কিছুই ঠিক ছিল মক্কা এবং মদিনায়।
কলকাতা রিপণ স্ট্রিটের মারহুদ আলম একাই গিয়েছিলেন হজ সম্পূর্ণ করতে। তিনি বলেন, সমস্ত কিছু ঠিক থাকলেও একটি বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষর নজর দেওয়া উচিত সেটি হল অন্যান্য দেশের হাজীদের কাবা শরিফের কাছাকাছি থাকার ব্যবস্থা করা হলেও ভারতীয় হজ যাত্রীদের রাখা হয়েছে বেশ কিছুটা দূরে। ফলে ভারতীয় হজযাত্রীদের বেশিরভাগ সময়েই কিছুটা হলেও সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। আগামী দিনে ভারতীয় হজযাত্রীদের বিশেষ করে এ রাজ্যের হাজীদের যাতে মক্কা এবং মদিনায় কাছাকাছি রাখা হয় সে-ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি তিনি।
কলকাতা কিলখানা এলাকার প্রতিবন্ধী মুহাম্মদ নাজির প্রথম উড়ানে হজ সম্পন্ন করে ফিরেছে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। প্রতিবন্ধী হিসেবে হজ সম্পূর্ণ করতে এবং সউদি সরকারের ব্যবস্থাপনা কী রকম ছিল, এ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া তিনি যে একজন প্রতিবন্ধী সেখানে নিজে বুঝতেই পারেননি। হুইল চেয়ার থেকে শুরু করে সমস্ত পরিষেবাই তিনি পেয়েছেন। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাঁকে সমস্তভাবে সহযোগিতা করেছেন। ফলে তাঁকে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। কলকাতা বিমানবন্দরে এসেও সউদি এয়ারলাইন্স থেকে শুরু করে সমস্ত কর্মীরাই তাঁকে সমানভাবে সহযোগিতা করেছে।
হজের প্রথম উড়ানে বিমানবন্দরে হাজীদের শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য হজ কমিটির চেয়ারম্যান নাদিমূল হক, সংখ্যালঘু দফতরের বিশেষ সচিব সাকিল আহমেদ, হজ কমিটির কার্যনির্বাহী আধিকারিক মুহাম্মদ নকি, হজসেবক তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনার বনভূমি কর্মাধ্যক্ষ এ কে এম ফারহাদ, হাজী রহিম বক্স ওয়াকফ স্টেট কমিটির সম্পাদক কুতুবউদ্দিন তরফদার প্রমুখ।
প্রথম উড়ানে ৩৭৭ জন হাজী এসেছেন বৃহস্পতিবার আরও একটি উড়ান নির্ধারিত সময়ের বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে কলকাতায় এসে পৌঁছয়। সেই উড়ানেও ৩৭৭ জন হজযাত্রী ছিলেন। রাজ্য হজ কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই হজের উড়ান। ২৭টি উড়ানে সমস্ত হাজীরা ফিরে আসবেন। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ত্রিপুরা, অসম, মণিপুর, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশার হাজীরা কলকাতা হিয়ে গিয়েছেন তারা নির্ধারিত বিমানেই ফিরে আসবেন। প্রতিদিনই রাজ্যের কোনও মন্ত্রী, সাংসদ বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন।