পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ এক অন্য কাশ্মীরফাইলসের গল্প বলে উপত্যকার গান্দেরবাল গ্রাম। যেখানে নেই ঘৃণা, বিদ্বেষ, জাত্যাভিমান বা উস্কে দেওয়া হিন্দুত্ব। গান্দেরবাল এমন এক গ্রাম যেখানে মুসলমানরা ধুমধাম করে অনাথ কাশ্মীরি পণ্ডিত মেয়ের বিয়ে দেন। যারা ঘৃণা ছড়ান , তাদের জন্য এটি একটি চোখ খুলে দেওয়ার মতো কাজ । প্রয়াত কাশ্মীরি পন্ডিত মোহনলালের কন্যা মীনাক্ষী কুমারীর বিবাহের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজেদের কাঁধে তুলে নেন মুসলিম প্রতিবেশীরা।পিতৃহারা মেয়েটিকে একবারও বাবার অভাব বুঝতে দেননি তাঁরা। প্রয়াত পণ্ডিত মোহন লালের মেয়ে মীনাক্ষী কুমারীর বিয়ে হয় গান্দেরবালের লার গ্রামে। এই পন্ডিত পরিবাটি একবারের জন্যও ভাবেননি কাশ্মীর ছেড়ে যাওয়ার কথা। মুসলিম প্রতিবেশীদের সঙ্গেই মিলেমিশে সুখে দুখে কাটিয়ে দিয়েছেন বছরের পর বছর।
বিবাহের যাবতীয় রীতি আচার পালন করেন মুসলিম মহিলারা। তাঁর গান ‘ওয়ানউন’ (কাশ্মীরি লোকগান যা বিবাহের সময় গাওয়া হয়)। বিয়েতে আগত অতিথিদের ওপর ফুলের পাপড়ি ছুঁড়ে দিয়ে স্বাগত জানান মুসলিম তরুণীরা। “আমরা মনে করি না যে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা আলাদা সম্প্রদায়। তারা আমাদের অংশ। আমরা যুগ যুগ ধরে পাশাপাশি বসবাস করে আসছি। আমরা তাদের সহায়তা করতে থাকব কারণ আমাদের একটি নৈতিক দায়বদ্ধতা রয়েছে” প্রাক্তন বিধায়ক শেখ ইশফাক জব্বার এমনটাই বলেছেন একটি স্থানীয় সংবাদপত্রকে। সনাতন ধর্মসভার গান্ডেরবার জেলা সভাপতি বদ্রীনাথ ভাট বলেন চার দিন ধরে মুসলিম সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলা উভয়েই সমস্ত আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ইতিমধ্যেই একটা ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে মীনাক্ষীর বিবাহের পর এক বৃদ্ধ মুসলিম নববিবাহিতাকে আশীর্বাদ করছেন।গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন এই একটি ছবি প্রমাণ যে কাশ্মীরি মুসলমান এবং হিন্দুরা একে অপরের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করছেন। ওই গ্রামের হিন্দুরা বলছেন “আমরা একসঙ্গে বসবাস করছি।
আমরা একে অপরের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। সম্প্রতি আমাদের কিছু মুসলিম ভাই হজ যাত্রায় গিয়েছিলেন , আমরাও তাদের মুসলিম আত্মীয়দের মতো দেখতে গিয়েছিলাম” । গান্ডেরবালের বাসিন্দা আফতাব আহমদ বলছেন এই প্রথম নয় যে কাশ্মীরি মুসলমান এবং পণ্ডিতরা আনন্দ ও দুঃখ ভাগাভাগি করেছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে, কাশ্মীরি মুসলমানরা উত্তর কাশ্মীরে একজন পণ্ডিতের শেষকৃত্য করেছিলেন। মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তারা সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান করেছিলেন। সরকারী পরিসংখ্যান বলছে করে যে কাশ্মীর থেকে প্রায় ৪১,১১৭ অভিবাসী পরিবার জম্মুতে রয়েছেন, ২১,০০০দিল্লি এবং অন্যান্য রাজ্যে। জম্মুতে বসবাসকারী স্থানান্তরিত পরিবারের মধ্যে ৩৭,১২৮ জন হিন্দু, ২২৪৬ জন মুসলমান এবং ১৭৫৮ জন শিখ।