পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: নবী (সা.) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে এবার নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে লুকআউট জারি করল কলকাতা পুলিশ। বর্তমানে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিজেপির সাসপেন্ডেড নেত্রী নূপুর। রাজ্যের একাধিক থানায় তার বিরুদ্ধে সমন জারি করা হলেও তা প্রাণনাশের কারণ দেখিয়ে সেই সমন এড়িয়ে চলেছেন তিনি। নারকেলডাঙা ও আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা অন্তত দু’বার তলব করা হয়েছিল তাকে। কিন্তু তিনি তা খুব সুকৌশলে এড়িয়ে যান।
নারকেলডাঙা থানায় এফআইআর-এর ভিত্তিতে জুন মাসে তাঁকে হাজিরার জন্য সমন পাঠানো হয়। কিন্তু নূপুর শর্মা নিরাপত্তা ইস্যু তুলে চার সপ্তাহ সময় চান। চার সপ্তাহ বাদে ফের সমন পাঠানো হয় তাঁকে। কিন্তু এবারেও তিনি হাজিরা এড়িয়ে যান। একইভাবে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানাও বার দু’য়েক তলব করে বহিষ্কৃত বিজেপি নেত্রীকে। সেই হাজিরাও এড়ান তিনি। তাই এবার লুকআউট নোটিস জারি করল কলকাতা পুলিশ।
গতকাল সুপ্রিম কোর্ট নূপুর শর্মাকে তীব্র ভর্ৎসনা করে। আদালতের তরফ থেকে বলা হয়েছে, দেশে যা ঘটছে, তার জন্য একক ভাবে নুপূর শর্মা দায়ী। বিচারপতি সূর্যকান্ত শুক্রবার বলেন, ‘‘আমরা ওই বিতর্ক সভাটি দেখেছি। যে ভাবে তিনি কথাগুলো বলেছেন দেখেছি। আপনি নিজে এক জন আইনজীবী হয়ে যা করেছেন, তা লজ্জার। আপনার উচিত সারা দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া।’’ তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত এফআইআর দিল্লিতে স্থানান্তর করার আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নূপুর শর্মা। নূপুরের সেই আর্জি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তাঁর আইনজীবী বলেন, নূপুরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তা শুনে বিচারপতি বলেন, ‘‘তিনি হুমকির মুখে পড়ছেন, না কি তিনিই নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছেন! তিনি দেশে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করেছেন। আজ গোটা দেশে যা চলছে, তার পিছনে দায়ী তিনি।’’ উদয়পুরে হত্যাকাণ্ডের জন্য আপনি দায়ী। আপনার জন্য একটা প্রাণ চলে গিয়েছে।
নূপুরের আইনজীবী বলেন, আমার মক্কেল ইতিমধ্যে ক্ষমা চেয়েছে। বিচারপতি বলেন, অনেক দেরি হয়েছে। আর ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে ‘আগার মাগর’ চলবে না। সরাসরি টিভিতে যান, গিয়ে ক্ষমা চান। বিভিন্ন রাজ্যে নূপুরের বিরুদ্ধে যে সব এফআইআর হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, আপনি বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্টে যান। পুলিশ এখনও আপনাকে স্পর্শ করেনি। আপনি একটি বড় দলের মুখপাত্র সেজন্য আপনি ধরাকে সরা জ্ঞান করে বসেছেন।
উল্লেখ্য, নবী (সা.) নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে গোটা দেশে উত্তেজনার আগুন জ্বলে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলা বিক্ষোভের আগুনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একের পর বাস পোড়ানো থেকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। মোতায়েন করা পুলিশ, র্যাফ। একাধিক প্রশাসনিক রদবদল হয়। হাওড়ায় ১৪৪ ধারা জারি থেকে কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়। বাতিল হয় একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন। ঘুরিয়ে দেওয়া হয় একাধিক ট্রেনের গতিপথ।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, শুধু কলকাতার বিভিন্ন থানায় অন্তত দশটি মামলা দায়ের হয়েছে বহিষ্কৃত বিজেপি নেত্রীর বিরুদ্ধে। সেই মামলাগুলির তদন্তের জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সেকারণেই তাঁর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি করা হয়েছে।