পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পাহাড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটাতে দীর্ঘ ১০ বছর বাদে ফের জিটিএ নির্বাচনের জন্য যখন তোড়জোড় শুরু হয়েছে, তখনই তাতে বাগড়া দিতে আসরে নামলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার একাংশের নেতা বিমল গুরুং। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে আপাতত জিটিএ নির্বাচন না করার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি ২০১১ সালের চুক্তি অনুযায়ী স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান চেয়েছেন। সেইসঙ্গে উত্তরবঙ্গের ৩৯৬টি মৌজাকে জিটিএ-র অধীনে আনার পাশাপাশি ১১টি গোর্খা জনজাতিকে তপশিলি জাতির মর্যাদা দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। যদিও গুরুংয়ের চিঠিকে গুরুত্বই দিতে চাইছে না নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ আমলা জানিয়েছেন, ‘জুন মাসের মধ্যে জিটিএ-র ভোট করানোর ব্যাপারে প্রশাসন বদ্ধপরিকর।’
সম্প্রতি পাহাড়ে গিয়ে স্থানীয় দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে একমাত্র বিমল গুরুং-রোশন গিরির নেতৃত্বাধীন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বাদে সব দলই পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে ও উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে জিটিএ ও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট করানোর দাবি জানিয়েছিলেন। গুরুংদের পক্ষ থেকে অবশ্য পাহাড়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের পরে জিটিএ-র নির্বাচন করানোর দাবি জানানো হয়। যদিও উত্তরবঙ্গকে যেভাবে আলাদা রাজ্যের দাবি জানিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব পরিস্থিতিকে ঘোরালো করছে, তাতে কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি হননি মুখ্যমন্ত্রী। জুনের মধ্যেই জিটিএ ও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জিটিএ নির্বাচন নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের সিদ্ধান্ত জানার পরেই কয়েকদিন আগে বিমল গুরুংয়ের বিশ্বস্ত সেনাপতি রোশন গিরির নেতৃত্বে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেন। পাহাড়ে রাজনৈতিক সমাধানের এক খসড়াও জমা দেন। কিন্তু তা নিয়ে রাজ্য প্রশাসন তেমন কোনও উচ্চবাচ্য না করায় এ দিন খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেই চিঠি পাঠিয়ে জিটিএ নির্বাচন স্থগিত রাখার আর্জি জানিয়েছেন বিমল গুরুং। চিঠিতে তিনি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির সংশ্রব ত্যাগ করার পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করেছে। ২০১১ সালে রাজ্য সরকারের সঙ্গে হওয়া চুক্তির কথা উল্লেখ করে পাহাড়ের ১১টি গোর্খা জাতিকে তপশিলি জাতির তকমা দেওয়ার দাবি জানিয়ে গুরুং লিখেছেন, ‘১১টি গোর্খা জনজাতিকে এসসি-র তকমা না দেওয়া হবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল।’ তবে জিটিএ নির্বাচন আপাতত না করানোর দাবি করলেও পাহাড়ের পঞ্চায়েত নির্বাচন করানোর বিষয়ে যে তাঁদের আপত্তি নেই, তাও চিঠিতে জানিয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই মুহূর্তে জিটিএ নির্বাচন হলে তেমন আশাব্যঞ্জক ফল হবে না বুঝতে পেরেই ভোটে বাগড়া দিতে আসরে নেমেছেন পাহাড়ের এক সময়ের বেতাজ বাদশাহ। কেন-না, বিধানসভা ভোট থেকে শুরু করে সদ্য সমাপ্ত পুরভোটে পাহাড়ে লড়তে গিয়ে ভরাডুবি হয়েছে বিমল গুরুংয়ের দলের।