পুবের কলম প্রতিবেদক, বসিরহাটঃ কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় বৌমাকে ঘরে উঠতে দিচ্ছিল না স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন । তালা লাগিয়ে দেয় বৌমার ঘরের দরজায় । বৃহস্পতিবার সকালে নক্করজনক এই ঘটনাটি ঘটে দেগঙ্গার চাকলা পঞ্চায়েতের বড়িরহাট চাঁদপুর চাঁদনিমোড়ে । নিজের ঘরে ঢুকতে না পেরে পাঁচ মাসের কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে পুলিশের দারস্হ হন তরুণী । শ্বশুরবাড়ির লোকজনের এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও । তরুণীকে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ফিরিয়ে দিতে গ্ৰামের মানুষ গণস্বাক্ষরিত আবেদনপত্র জমা দেয় দেগঙ্গা থানায় । এরপর ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ হয় পুলিশ ।
জানা গিয়েছে , দত্তপুকুর থানার বিড়া নারানপুরের এলিনা বিবির সঙ্গে দেগঙ্গার বুড়িরহাট চাঁদপুরের আশাদুল ইসলামের প্রেম ভালোবাসা করে বিয়ে হয় বছর দেড় আগে । তাদের একটি পাঁচ মাসের কন্যা সন্তান আছে ।এলিনা জানান, সাত মাস আগে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমাকে বাপের বাড়ি দিয়ে আসে স্বামী । পাঁচ মাসে আগে আমার কন্যা সন্তান হওয়ায় বাপের বাড়ি থেকে আর নিয়ে আসেনি স্বামী । এরপর বৃহস্পতিবার সকালে নিজেই মেয়েকে কোলে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে এলে ঘরে ঢুকতে দেয়নি শ্বশুর ও শাশুড়ি । স্বামী জানিয়ে দেয় পুত্র সন্তান হয়নি যখন তখন ঘরে ঢোকা হবে না । এদিন দেগঙ্গা থানার সামনে কাঁদতে কাঁদতে এলিনা বলেন, ছেলে যদি উপরওয়ালা না দেন । সেই দোষ কি আমার । মেয়ে জন্ম দেওয়া কি এই সমাজে অপরাধ ? এদিন চাঁদপুরে এলিনার শ্বশুর নজরুল ইসলাম ও শাশুড়ি সাহিদা বিবি বলেন, দজ্জাল বৌমা আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করে আগেই মামলা করেছে । আবারও মিথ্যা অভিযোগ করছে আমাদের বিরুদ্ধে ।
তবে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া নিয়ে মুখ খুলতে চাইনি তাঁরা । প্রতিবেশিরা জানান, আশাদুলের এটা দ্বিতীয় বিয়ে । এর আগে দেগঙ্গার গোরাইনগরে বিয়ে করলেও তাঁর সঙ্গে ঘর সংসার করেনি আশাদুল । এলিনাকে নিয়ে প্রায় ঝগড়া ঝাঁটি হত বাড়িতে । স্থানীয় তৃনমূল পঞ্চায়েত সদস্য জবের আলি মন্ডল বলেন, একাধিকবার সালিশি করার পরও এই সমস্যা মেটানো সম্ভব হয়নি । মেয়েদের জন্য রাজ্য সরকারের এত উন্নয়ন মুলক প্রকল্প জারি থাকলেও সেই কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় স্ত্রীকে ঘরে ঢুকতে না দেওয়া জঘন্যতম অপরাধ ।
পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, ওই গৃহবধূ তাঁর কন্যা সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যাবে তা জানানো হয়েছিল শ্বশুর বাড়ির লোকজনের। কিন্তু তাকে বাড়িয়া উঠতে না দেওয়ায় হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। দেগঙ্গা থানার নির্দেশে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাকলা ফাঁড়ি থেকে পুলিশ কর্মীরা গিয়ে ওই গৃহবধূর বন্ধ ঘরের তালা ভেঙে তাকে ঘরে তুলে দেন। পাশাপাশি গৃহবধূ ও তার শিশু কন্যা সন্তানের খাদ্যের জন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেন। যদিও এই ঘটনার পর থেকে স্বামী আশাদুল ইসলাম পলাতক। একবিংশ শতাব্দীতে এসে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় এখনো মেয়েদের অবহেলার নজরে দেখা হয় তার এই জ্বলন্ত নজির ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে আমাদের সমাজে ।