পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: পরিবার হলো মানুষের শিক্ষার প্রথম স্থান যেটা মানুষ সারাজীবন তার সাথে বহন করে! প্রতিটি পরিবার হচ্ছে শিশুর জন্য বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কারণ শিশুরা গড়ে ওঠে পরিবার থেকে।পারিবারিক শিক্ষা পেলে ভালো মানুষ হওয়া সহজ হয়। অন্যদিকে পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা না পেলে সঠিক পথে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যায়!
ইসলামে পরিবার একটা উদীপ্ত দর্পণ!
মূল্যবোধ, নৈতিকতা, সভ্যতা , ভদ্রতা,কৃতজ্ঞতা বোধ, অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-স্নেহ, ভালোবাসা পরোপকার, উদার মানসিকতা- এগুলো তথাকথিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খুব বেশি অর্জন করা যায় না। একাডেমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পুঁথিগত বিদ্যা আর ডিগ্রী অর্জন করা যায় কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতার শিক্ষা পরিবার থেকেই আসে! সব শিক্ষা ঠুনকো হয়ে যায় যদি তোমার সামান্যতম মূল্যবোধ না থাকে!
একটা শিশু প্রথম কথা থেকে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাওয়ার আগে পর্যন্ত তার মাতা পিতার কাছে সময় থাকে শিশু কে নিজের মতো করে গড়ে তোলার,সেই সময় টা একটা শিশুর কাছে তার জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময় !তাই জন্য মহান আদম আলেহ সালাম কে সৃষ্টির পর পর তাঁর পরিবার সৃষ্টির আগে আল্লাহ তাআলা আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।” (২:৩১)
পারিবারিক শিক্ষা নিশ্চিত করার গুরুত্ব : পিতা মাতা ও অভিভাবকদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো, তাঁদের সন্তান সন্ততিদেরএমন আর্দশ সন্তান ও মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, যেন তারা দুনিয়ায় ওহ আখিরাতে সফল পরকালে জাহান্নামের আগুন থেকে যেনো বাঁচতে পারে। এর জন্য পারিবারিক শিক্ষার বিকল্প নেই। পরিবার প্রধানদের পারিবারিক শিক্ষার পরিবেশ সঠিক করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৬)
পারিবারিক শিক্ষার প্রভাব : আবু হুরাইয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক সন্তান ফিতরাতের (ইসলাম) ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান কিংবা অগ্নিপূজক বানায়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩১৯; মুসলিম, হাদিস : ৬৯২৬)
লুকমান (আ.) এর পারিবারিক শিক্ষা : লুকমান (আ.) স্বীয় পুত্রকে নানান শিক্ষা দান করতেন। তিনি সন্তানকে আল্লাহর প্রতি ঈমান, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, নামাজ কায়েম করা, অহংকার পরিহার করে বিনয়ী হওয়া, সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ করা, আপদে-বিপদে ধৈর্য ধারণ এবং সব জায়গায় শালীনতা অবলম্বনের শিক্ষা দান করতেন। এগুলোর বিস্তারিত বিশ্লেষণ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হওয়ায় তা সবার জন্য একান্ত পালনীয়। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন লুকমান উপদেশচ্ছলে তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন, ‘হে বৎস, আল্লাহর কোনো শরিক করো না। নিশ্চয় শিরক চরম জুলুম।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৩)
পরিবারে ইসলামচর্চা : পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ বজায় রাখা ও দ্বিন পালনে অগ্রসর হওয়া একান্ত জরুরি। পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ বজায় থাকলে পরিবারের সদস্যদের জন্য ধর্মীয় বিধি-নিষেধ পালন করা সহজ হয়। সন্তানরাও দ্বীনি পরিবেশে বেড়ে ওঠায় তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, মাতা-পিতার প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়। তাদের মধ্যে শালীনতা নম্রতা বাস্তবতার এক উজ্জ্বল শিক্ষা দীপ্ত হয় এমন পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হয় না। সন্তানরা নেশা ও মাদকে জড়ায় না। আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যেও আত্মিক সুখ-শান্তি বিরাজ করে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তোমার পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ দাও ও তাতে অবিচলিত থাকো।’ (সুরা তা-হা, আয়াত : ১৩২) এবং অল্পে তুষ্ট হওয়া যায়!
হাদিসে বলা হয়েছে, আমর ইবনে শুয়াইব তাঁর বাবা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাযের নির্দেশ দাও। ১০ বছর হলে প্রয়োজনে নামাযের জন্য প্রহার করো। আর তাদের শোয়ার জায়গা পৃথক করে দাও।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)
পরিশেষে এই বলা যায় পরিবারে ছোট্ট থেকেই একটা শিশুকে আল্লাহভীতি, পরকালীন জবাবদিহিতা, মুসলমানদের দায়িত্ব-কর্তব্য, আল্লাহর হক, বান্দার হক, পারস্পরিক সহমর্মিতা ইত্যাদি শেখানোর চেষ্টা করা উচিত! সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দেবেন। সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখার পাশাপাশি তাদের সঙ্গী-সাথি ও বন্ধু-বান্ধবদের সম্পর্কেও নজর রাখবেন।