প্রদীপ মজুমদার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিযোগিতায় বেছে নেওয়া বিশ্বসুন্দরী নয়– প্রকৃত সুন্দরীরা বসবাস করেন পাকিস্তানের হানজা উপত্যকায়। শুধু সুন্দরী নয়– দীর্ঘায়ু জাতিও। সেখানকার সব মানুষ যেমন দীর্ঘদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে– তেমনি সুন্দর চেহারাও। হানজা উপত্যকায় বাস করে বলে তাঁদের বলা হয় হানজা সম্প্রদায়। পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বতমালায় হানজা উপত্যকার অবস্থান। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই উপত্যকা। একইসঙ্গে হানজা সম্প্রদায় তাঁদের নিজস্ব গুণের জন্য প্রসিদ্ধ। ধর্মে এরা বৌদ্ধ।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন নারীদের গড় আয়ু ৬০ বছর– সেখানে হানজা সম্প্রদায়ের নারীদের গড় আয়ু ১৬০ বছর। সেখানকার ৬৫ বছর বয়স্কা নারীদের দেখলে মনে হবে ৩০ বছরের তরুণী। এই সম্প্রদায়ের নারীরা ৭০ বছরেও সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই বাস্তব।
এই সম্প্রদায় পৃথিবীর একমাত্র জনগোষ্ঠি— যেখানে মানুষ গড়ে ১০০ বছরের বেশি বাঁচে। শরীর– চেহারা– কাজ কোথাও তাঁদের বয়সের ছাপ থাকে না। এছাড়া এই সম্প্রদায়ের নারীরা পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দরী হিসেবে পরিচিত। এককথায় ওই উপত্যকায় নারীরা চিরযুবতী। তাদের দীর্ঘায়ু ও চিরতরুণী হওয়ার পেছনে রহস্যটা কি– তা জানার আগ্রহ সকলেরই। গবেষণাও হয়েছে বিস্তর। সেই গবেষণা থেকে জানা যায়– তারা ধরাবাধা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দিনে দুইবেলা খায় এবং প্রচুর কায়িক পরিশ্রম করে। তারা সব ধরনের ফলের শরবত পান করে নিয়মিতভাবে। এছাড়া হানজা সম্প্রদায়ের ৯৯ শতাংশ মানুষই শাকাহারি। তাদের খাদ্যদ্রব্যগুলোর বেশিরভাগই তৈরি হয় পনির– দুধ– বাদাম এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য দিয়ে। ঘুম থেকে ওঠার পর প্রাতঃরাশ এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পর রাতের খাবার সারে। এর মাঝে নাকি তারা আর কোনও খাবারই খায় না।
হানজা উপজাতির মানুষদের জীবনে দুঃখ– অবসাদ– চিন্তার কোনও জায়গা নেই। নারী-পুরুষ উভয়েই শারীরিক পরিশ্রম করে। ঠোঁটের কোণে সর্বদা হাসি লেগে থাকে। এই সম্প্রদায়কে আলেকজান্ডারের বংশধারার একটি অংশ বলে মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ। তবে স্থানীয় ব্রুশো বা হানজা সম্প্রদায়ের দাবি– আলেকজান্ডার তাঁর ম্যাসিডোনিয়ান সৈন্য নিয়ে এখানে এসেছিলেন। অনেক সৈন্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের এখানে রেখে দেওয়া হয়। রোগবিহীন হানজাদের সতেজ থাকার পেছনে রয়েছে অ্যাপ্রিকটস ফলের ভূমিকা। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্যানসার– টিউমার ফ্রি সম্প্রদায় বলা হয় এদের। অ্যাপ্রিকটস ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিবাভালিন বা ভিটামিন বি ১৭ রয়েছে। যা ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম।
বছরে দুই চার মাস হানজা সম্প্রদায় অ্যাপ্রিকটস ফলের জুস ছাড়া আর কিছু খায় না। এই রীতি তাদের বহু প্রাচীন। আর এর জন্যই তাদের শরীরে কোনও রোগ বাসা বাঁধতে পারে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। হানজাদের ত্বক এত উজ্জ্বল কেন? গবেষকরা বলছেন– হিমবাহ গলা জলে স্নান এবং পানীয় হিসাবে ব্যবহারই এর কারণ। ত্বক উজ্জ্বল হওয়ার আরও কারণ হলো– হিমবাহের জল গরম করে তার মধ্য তুমুর নামের এক প্রকার গাছের পাতা মিশিয়ে হার্বাল-চা পান করে এরা। শিশুকাল থেকে হানজা মেয়েদের সৌন্দর্য বিকশিত হতে শুরু করে। তাদের অবিশ্বাস্য সুন্দরী হওয়ার পেছনে আরও একটি রহস্য হলো– নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীর চর্চা। প্রতিদিন সকালে কাজ শুরুর আগে কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে শরীর চর্চা। এরজন্য বয়স বাড়লেও শরীর দুর্বল হয়ে যায় না। এই সম্প্রদায়ের মানুষের শিক্ষার হার ৯০ শতাংশেরও বেশি– যা কোনও উন্নয়নশীল দেশের চাইতে বেশি। তাই এদের মুর্খ-পাহাড়ি ভাবলে ভুল হবে। তাদের শিক্ষা– আচার-ব্যবহার কিংবা সংস্কৃতি— যে কোনও দেশের তুলনায় উন্নত।