রাবিয়া বেগম, বহরমপুরঃ চলন্ত ট্রেন থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে নৃশংসভাবে খুন হওয়ার নাজিমুদ্দিন সেখের জানাযা সম্পন্ন হল। মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটায় কয়েক হাজার মানুষের নাজিমুদ্দিন সেখের নামাযে জানাযায় অংশ গ্রহণ করে। কান্না আর্তনাদের মধ্যে দাফন করা হয় নাজিমুদ্দিন সেখের দেহ। বেলডাঙা থানার বেগুনবাড়ি গ্রামে নিজেদের কবরস্থানে শোকের ছায়া নেমে আসে। সঙ্গে আশেপাশের গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ রেলের ছানা ব্যবসায়ী যাত্রীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে। এমন অভিযোগ করছে– নাজিমুদ্দিন সেখ না থাকলে খুন হতে হত না।
মৃত নাজিমুদ্দিন সেখ পেশায় গাড়ি চালক। বেগুনবাড়ি গ্রামের একটি স্কুল গাড়ি চালাত। লকডাউন থেকে গাড়ি বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে যায়। হায়দরাবাদের একটি নার্সিং কলেজের ছাত্ররা পরীক্ষার জন্য হায়দরাবাদ গিয়েছিল। নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ রাজ্যের ছাত্রদের গাইড হিসেবে হায়দরাবাদ গিয়েছিল।
সোমবার বেশ কয়েকজন নার্সিং ছাত্রকে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য লালগোলা মেমোয় চেপেছিল। ছাত্ররা প্রায় নেমে গেলেও দু’জন ছাত্র দেবগ্রামে সঙ্গে ছিল।
মৃত নাজিমুদ্দিন সেখের স্ত্রী নারগিসা খাতুন। সাড়ে তিন বছরের বড় মেয়ে মারিয়াস খাতুন এবং দশ মাসের ছোট মেয়ে। দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা নারগিসা কান্নার ভাষা হারিয়েছেন। শুধু একটাই প্রশ্ন করছেন– আল্লাহ্ কেন আমার এমন করলেন। মেয়ে দু’টিকে কি করে মানুষ করব।
নাজিমুদ্দিন সেখের বড় তাই নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, যারা ভাইকে খুন করেছে তারা কতটা অপরাধী তার থেকেও অপরাধী ওই ট্রেনে কর্তব্যরত দু’জন জিআরপি জওয়ান। দুই জিআরপি কর্মীর সামনে ছানা ব্যবসায়ীরা ভাই নাজিমুদ্দিনকে মারধর করেছে। জিআরপি ইচ্ছা করলে ঝামেলা কমাতে পারত। ভাইকে দেবগ্রাম স্টেশনে নামিয়ে ধরে আটকে মারধর করেছে।
জিআরপি দু’জন জওয়ান দেখেও না দেখার মতো করে চলে গেছে। ফলে এই খুনের জন্য জিআরপির দুই জওয়ান সম্পূর্ণ দায়ী।
মৃত নাজিমুদ্দিন সেখের বাবা আলাউল ইসলাম দাবি করেছেন, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। ভবিষ্যতে যেন ট্রেনের যাত্রীদের আমার ছেলের মতো আর কাউকে হারাতে না হয়। একজন গরিব বৃদ্ধার ক্যাপসিকাম চুরি হয়েছিল বলে সেই মহিলাকে দু’শো টাকা সাহায্য করেছে। বেথুয়াডহরির পর চুরি যাওয়া ক্যাপসিকামের ব্যাগ ছানা ব্যবসায়ী ঘোষদের ছানার ক্যানে পাওয়া যায়। গরিব মানুষের জিনিস চুরির প্রতিবাদ করায় খুন হতে হয়েছে ছেলেকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কৃষ্ণনগর জিআরপি অফিসে কর্তব্যরত দুই কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কর্তব্যরত কনস্টেবলদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারপর প্রকৃত দোষীদের খোঁজে জিআরপি নামবে।