আহমদ আবদুল্লাহ: ২০১০ সালের পর ওবিসি-এ তালিকাভুক্ত ৭৭টি শ্রেণিকে এই তালিকা থেকে খারিজ করে দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট শ্রেণিগুলির মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছেন যে, এই রায়কে মানা হবে না। কারণ, এই রায় ‘বিজেপির রায়’। এর বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদন করা হবে, তাতে অনেকেই আশ্বস্তবোধ করেছেন। এ ছাড়া বিধানসভায় আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও নতুন করে ওবিসি ঘোষণা করার সুযোগ রয়েছে।
সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রীর উচ্চতর আদালতে যাওয়ার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই কলকাতা হাইকোর্টে আবেদনকারীদের দু’টি পার্টি আগেই সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছে গেছে। তাঁরা হলেন পূরবী দাস এবং ‘আত্মদীপ’ নামে একটি গেরুয়াপন্থী সংগঠন। তারা মে মাসের ২৭ ও ২৮ তারিখ সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করেছেন। এর ফলে রাজ্য সরকার যখন সুপ্রিম কোর্টে যাবে তখন এই দু’জনকে না জানিয়ে কোনও শুনানি হবে না। ফলে তারা প্রস্তুতির জন্য ব্যাপক সময় পাবেন। ফলশ্রুতিতে ওবিসি সংরক্ষণ বাতিলের দাবি জানানো এই মামলাকারীরা এক পা কিন্তু এগিয়ে রইলেন।
কলকাতা হাইকোর্ট মে মাসের ২২ তারিখে ওবিসি সংক্রান্ত একটি মামলার রায় দিয়েছে। এই রায়ে ২০১০ সালের পরে যেসব সম্প্রদায়কে ওবিসি বলে স্বীকৃতি দিয়ে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়েছিল, তা মাননীয় হাইকোর্টের দুই বিচারপতি রাজশেখর মান্থা ও তপোব্রত চক্রবর্তী অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এর ফলে ওবিসি-এ’র অন্তর্ভুক্ত ৭৭টি শ্রেণির ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্তি বাতিল হয়ে গেছে। দুই বিচারপতি শ্রী মান্থা ও শ্রী চক্রবর্তী রাখঢাক না রেখে স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, এই শ্রেণিগুলিকে তৃণমূল সরকার মুসলিম তোষণের জন্য রাজনৈতিক স্বার্থে কোনও বাছ-বিচার বা সার্ভে না করেই ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
বোঝা যায়, ওবিসি তালিকা থেকে এই ৭৭টি শ্রেণিকে বাতিল করার পিছনে বিচারপতিদ্বয়ের মুখ্য বিবেচনা কী ছিল। অর্থাৎ তাঁদের মুখ্য বিবেচনা ছিল, ৭৭টি মুসলিম শ্রেণিকে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা ‘মুসলিমদের অপমান’ এবং তৃণমূল সরকারের তোষণ রাজনীতির ফলশ্রুতি।
অনেকে অবশ্য বলছেন, বিচারপতিরা এই রায়ে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা আইনি বিবেচনায় নয় বরং তাঁদের ব্যক্তিগত মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। এই ধরনের মন্তব্য হাইকোর্টের মতো সম্মানিত আদালতের বিচারপতিদের শোভা পায় না বলেও অনেক আইন বিশেষজ্ঞ অভিমত প্রকাশ করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই রায় শোনার পর নির্বাচনী প্রচার মঞ্চ থেকেই ঘোষণা দিয়েছেন, এই রায়টি বিজেপির রায়। এই ধরনের রায়কে মানা হবে না। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার উচ্চতর আদালতে আবেদন করবে। আবেদন করবে চলমান ভোট পর্ব শেষ হওয়ার পর।
পুবের কলম-এ আগেই বলা হয়েছে, মুসলিম ওবিসিরা যাতে সংরক্ষণ না পায় তার জন্য ২০১০ সালের পর পরই ওবিসি-এ সংরক্ষণের বিরুদ্ধে গেরুয়াপন্থী কিছু ব্যক্তি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিল এবং তাদের দাবি ছিল ২০১০ সালে যাদের স্বীকৃত সার্ভের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়েপড়া শ্রেণি হিসেবে যে গোষ্ঠীগুলিকে ওবিসি-এ বলে মান্যতা দেওয়া হয়েছে, তা যেন বাতিল করা হয়। এ নিয়ে হাইকোর্টে একটি মামলা হয়, যাতে মামলাকারীরা হেরে যায়। যাদের ওবিসি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে হাইকোর্ট তাদের বৈধ বলে রায় দেয়। কিন্তু বিচারপতি রাজশেখর মান্থা ও তপোব্রত চক্রবর্তী সম্প্রতি ওবিসি সংক্রান্ত যে রায়টি দিয়েছেন, তাতে হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায়টির কোনও উল্লেখই নেই। একই বিষয়বস্তুসম্পন্ন মামলায় আগে ও পরে দু’টি বেঞ্চ দুই রকম রায় দিতে পারে না বলে অনেকে অভিমত প্রকাশ করেছেন।