পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ ভোট উৎসবের শেষ দফার দু’দিন আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সরব হলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং। বৃহস্পতিবার প্রক্তন প্রধানমন্ত্রীর নামে কংগ্রেসের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা এক খোলা চিঠিতে মোদি জামানাকে তুলোধনা করেছেন মনমোহন। শেষ দফার নির্বাচনে সমগ্র দেশের সঙ্গে পাঞ্জাবের মোট ১৩টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। তার আগে কংগ্রেস নেতা তাঁর খোলা চিঠিতে লেখেন, ” বিগত দশ বছরের সরকার পাঞ্জব, পাঞ্জাবি এবং পাঞ্জাবিত্বকে কটুক্তি করতে কোনও কসুর করেন নি।” পাশাপাশি তিনি ওই চিঠিতে দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের ধারাবাহিক আন্দোলনের উল্লেখ করে বলেন, এই সরকারের সময়কালে দিল্লি সীমান্তে অবিরাম অপেক্ষা করতে করতে ৭৫০ জন কৃষকদের শহিদ হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই পাঞ্জাবের। শুধুমাত্র লাঠি রাবার বুলেট নয় সংসদের অভ্যন্তরেও কৃষকদের ‘আন্দোলনজীবী’ ‘পরজীবী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। কৃষকদের একমাত্র দাবি ছিল, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে যে তিনটি কৃষি আইন সরকার চালু করেছিল তা যাতে প্রত্যাহার করা হয়।
মনমোহন পাঞ্জাবি জাতির ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে বলেন, “পাঞ্জাব এবং পাঞ্জাবিরা যোদ্ধা। আমরা আমাদের আত্মত্যাগের জন্য পরিচিত।” চিঠিতে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আমাদের অদম্য সাহস, সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব, এবং ভ্রাতৃত্বের ধর্ম গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি সহজাত আকর্ষণ আমাদের মহান জাতিকে রক্ষা করতে পারবে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তাঁর খোলা চিঠিতে কংগ্রেসের পাঁচটি গ্যারান্টির কথাও তুলে ধরে কৃষকের ন্যায়ের কথা বলেন। পাশাপাশি তিনি আইনি গ্যারেন্টির কথা হিসাবে বলেন নুন্যতম সহায়ক মূল্যের কথা, কৃষিজাত পণ্যের স্থায়ী আমদানি রপ্তানি নীতি, ঋণ মুকুবের জন্য কৃষি অর্থনীতি সংক্রান্ত একটি স্থায়ী কমিশন, ফসলের ক্ষতির ক্ষেত্রে ৩০ দিনের মধ্যে কৃষকদের সরাসরি বীমাকৃত ক্ষতিপূরণ হস্তান্তর এবং কৃষিপণ্য থেকে জিএসটি অপসারণ। একইসঙ্গে মনমোহন আশা প্রকাশ করেছেন, এই পদক্ষেপগুলি দ্বিতীয় প্রজন্মের কৃষি সংস্কারের জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করবে।
কেন্দ্রীয় তহবিল প্রদানে তিনি পাঞ্জাবের প্রতি মোদি পরিচালিত কেন্দ্র সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণের প্রতিবাদও করেছেন চিঠিতে। মনমোহন উল্লেখ করেছেন, পাঁচ বছর ধরে কংগ্রেস দল যখন ক্ষমতায় ছিল তখন কেন্দ্রীয় তহবিল দিতে অস্বীকার করে বিজেপি সরকার। অথচ এই তহবিল পূর্ববর্তী বিজেপি আকালি সরকারের করে যাওয়া ঋণ পুনর্গঠনের জন্য, কৃষিঋণ মুকুবের জন্য বা মনরেগার জন্য।
এই চিঠিতে কংগ্রেস নেতা আল্লামা ইকবালের কবিতা উদ্ধৃত করেছেন এবং নির্বাচনী প্রচারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ঘৃণা ভাষণের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি সবচেয়ে জঘন্য ধরনের ঘৃণামূলক ভাষণে লিপ্ত হয়েছেন এই নির্বাচনের সময়ে। এই নির্বাচন চলাকালীন আমি রাজনৈতিক প্রচারগুলি লক্ষ্য করছি। মোদিজি এবারে যে ঘৃণাভাষণ দিয়েছেন তা খুবই জঘন্য ছিল। এই ভাষণের মাধ্যমে সমাজে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করেন মোদি। মোদিজি আমার দেখা এমন প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি প্রধানমন্ত্রীর অফিসের মর্যাদা খর্ব করেছেন। এই পদের মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন। অতীতে কোনও প্রধানমন্ত্রী সমাজের কোনও একটি অংশকে বা বিরোধী দলকে টার্গেট করে এমন ঘৃণ্য, অসংসদীয় ভাষা প্রয়োগ করেননি। তিনি আমার বিরুদ্ধে কিছু মিথ্যা বিবৃতিও দিয়েছেন। আমি আমার জীবনে কখনও এক সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায় থেকে আলাদা করে দেখিনি। এটায় শুধুমাত্র বিজেপির কপিরাইট আছে।
এ দিকে সশস্ত্র বাহিনীর উপর অগ্নিবীর প্রকল্প ‘চাপিয়ে দেওয়ার’ জন্যও বিজেপির সমালোচনা করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। এই আবহে মনমোহন তাঁর চিঠিতে লেখেন, “অগ্নিবীর প্রকল্প জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করছে। কংগ্রেস তাই অগ্নিবীর প্রকল্প বিলোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’ মনমোহনের কথায়, সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে মাতৃভূমির সেবা করার স্বপ্ন দেখা পঞ্জাবি কৃষকের ছেলেরা এখন সেনায় যাওয়ার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। তারা ৪ বছরের জন্য চাকরি পাওয়ার জন্যে এই নিয়োগ পাওয়ার আগে দু’বার ভাবছেন। যাঁরা সেনায় যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে এই বর্তমান সরকার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”