আইভি আদক, হাওড়া: ভোটের সকালেই উত্তেজনা। অভিযোগ, হাওড়ার বালিতে শান্তিরাম বিদ্যালয়ে ভোটারদের মোবাইল হাতে ঢুকতে বাধা দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। সকাল থেকেই সেখানে ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়ে। সকাল সাতটা থেকে ভোট। তার আগেই ভোটারদের মোবাইল নিয়ে ঢুকতে বাধা দিলে বচসা হয়।
- হাওড়ার আর্য বালিকা বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্রে ভোট দিলেন সিপিআইএম প্রার্থী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, গতকাল উত্তর হাওড়া, লিলুয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় কিছু গণ্ডগোল হয়েছে। ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। তবে, ভোটারদের কাছে আবেদন প্রত্যেকে ভোটদান করুন। উৎসবের মেজাজে ভোট দিন।
- সকাল ৭টা নাগাদ ভোট দিতে এলেন হাওড়ার বিজেপি প্রার্থী ডা: রথীন চক্রবর্তী। মধ্য হাওড়ার কাসুন্দিয়া মহাকালী বিদ্যালয়ে অন্যান্য ভোটারদের সঙ্গেই লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন রথীন। ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। এদিন সকাল থেকেই এই স্কুলের ৪টি বুথে ভোটারদের লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো।
- ভোটের আগের রাতেই রবিবার সিপিএমের পার্টি অফিসে ভাঙচুর ও পার্টি কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উত্তর হাওড়ার সালকিয়া ত্রিপুরা রায় লেনে। ঘটনায় অভিযোগের তীর তৃণমূলের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় গোলাবাড়ির থানার পুলিশ। হামলায় আহত হন দুই বাম কর্মী সমর্থক। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়।
- শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআইএম প্রার্থী ভোট দিলেন চিত্তরঞ্জন বিদ্যালয়ে। ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রে নিজের এলাকায় ভোট দিয়ে তিনি জানান জেতার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গায় এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি। হাওড়া বাঁকড়া অঞ্চলে অশান্তির খবর পেয়ে সেখানেও ছুটে যান দীপ্সিতা।
- ভোটদান করলেন রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি। আজ সকালে তিনি পুরসভার বুথে নিজের ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে এসে ভোটদান করে বলেন, সকাল সকাল ভোট দিলাম। এবার নিজের বিধানসভা এলাকায় যাব। সেখানেই সারাদিন ধরে ভোট প্রক্রিয়া কেমন চলছে তা মনিটরিং করব।
- শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের শলপ পাইকানডাঁসি ডা: বিধান চন্দ্র রায় শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেন হাওড়া জেলা সদর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা ডোমজুড়ের বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ।
- হাওড়ার কাসুন্দিয়া মহাকালী বালিকা বিদ্যালয়ে ভোট দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে এদিন ওই বুথেই ভোট দেন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও উদ্যান পালন দপ্তরের মন্ত্রী অরূপ রায়। প্রসুন বাবু বলেন, হাওড়ায় এখনো পর্যন্ত ভোট অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। ভোটদানের হার ভালোই। মন্ত্রী অরূপ রায়ও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
- লিলুয়ার ভারতীয় হাই স্কুলে উত্তেজনা। প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধরের অভিযোগ। ওই স্কুলের ১৭৬ নম্বর বুথে উত্তেজনা। ওই বুথে বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের তীব্র বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। মিনিট পনেরো পর কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই কেন্দ্রে অপেক্ষা করবেন বলে হুমকি দেন বিজেপি প্রার্থী।তিনি সেখানে নির্বাচন কর্মীদের সাথে কথা বলেন। প্রিসাইডিং অফিসারকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
- শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের ক্ষীরোদাময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবৈধ জমায়েতকে সরিয়ে দিতে সেন্ট্রাল ফোর্স লাঠিচার্জ করলো। ওই বিদ্যালয়ে পাঁচটি বুথ রয়েছে।
- বালির শান্তিরাম স্কুলে ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে অশান্তির অভিযোগ। লাঠিচার্জের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযোগ মোবাইল নিয়ে এখানে ভোটারদের বুথে ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। এছাড়াও পোলিং এজেন্টদের খাবার দিতে গেলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এছাড়া পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তিনি নির্দিষ্ট একটি দলকে ভোট দিতে বলছেন।
- ভোটের শেষবেলায় হাওড়ার উনসানিতে সংঘর্ষ। হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের উনসানি এলাকায় তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়। এলাকায় বিজেপি প্রার্থী ডা: রথীন চক্রবর্তী উনসানির ক্যাম্প অফিস ভাঙচুরের খবর পেয়ে গরফা প্রাথমিক বিদ্যালয় পৌঁছান। তারপর থেকেই শুরু হয় গন্ডগোল। অভিযোগ সেখানে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে প্রথমে বচসা এবং তারপর সংঘর্ষ হয়। ঘটনায় একাধিক জন আহত হন।
- উল্লেখ্য, কড়া নিরাপত্তায় আজ পঞ্চম দফার ভোট। হাওড়া, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর-সহ সাত কেন্দ্রে ভোট আজ। ভোটে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় নামানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এর পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন বেশ কয়েক হাজার রাজ্য পুলিশ। রয়েছে পুলিশের ক্যুইক রেসপন্স টিম, হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। হাওড়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আজ ভোটগ্রহণের জন্য সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রে এবার মোট ভোটার ১৭ লক্ষ ৬৯ হাজার ১৮৪। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লক্ষ ১০ হাজার ৫৩৫ এবং মহিলা ভোটার ৮ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬১০ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার সংখ্যা ৩৯ জন। অপরদিকে, উলুবেড়িয়ায় মোট ভোটার ১৭ লক্ষ ৪১ হাজার ৪৩৮ জন। এর মধ্যে ৮ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩৬৯ জন পুরুষ এবং ৮ লক্ষ ৫৬ হাজার ১২ জন মহিলা। এখানে মোট ৫৭ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। হাওড়া সদরে বিশেষভাবে সক্ষম ভোটারের সংখ্যা ৪ হাজার ৮০২ জন এবং উলুবেড়িয়ায় ১১ হাজার ৯৯৯ জন।
এবারের নির্বাচনে ১০০ বছর বা তার বেশি বছরের ভোটার সংখ্যা হাওড়া সদরে ৮৪ জন এবং উলুবেড়িয়ায় ৯৫ জন। ১৮-১৯ বছরের ভোটার সংখ্যা হাওড়া সদরে ২৮ হাজার ৫৯৬ জন এবং উলুবেড়িয়ায় ৪২ হাজার ৯২০ জন। এবারের নির্বাচনে হাওড়া সদরের মোট পোলিং স্টেশন ১ হাজার ৮৯৫টি। এর মধ্যে শহরে পোলিং স্টেশনের সংখ্যা ১ হাজার ২২৩টি এবং গ্রামীণে ৬৭২টি এবং উলুবেড়িয়ায় ১ হাজার ৬৫৮টি। শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে হাওড়ার ডোমজুড় এবং জগৎবল্লভপুরে রয়েছে ৬৩৭টি বুথ। হাওড়ায় মোট ৭৯০টি লোকেশনে পোলিং স্টেশন করা হয়েছে। এর মধ্যে শহরে ৪৪৯টি এবং গ্রামীণে ৩৪১টি লোকেশনে পোলিং স্টেশন করা হয়েছে।
অপরদিকে, উলুবেড়িয়ায় মোট ১ হাজার ৩০৮টি পোলিং স্টেশন লোকেশনের মধ্যে ১১১টি শহরে এবং গ্রামীণে ১ হাজার ১৯৭টি জায়গায় পোলিং স্টেশন হয়েছে। মহিলা পরিচালিত পোলিং স্টেশনের সংখ্যা হাওড়ায় ৩২২টি এবং উলুবেড়িয়ায় ২২৭টি। হাওড়া এবং উলুবেড়িয়ার সব পোলিং স্টেশনে ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাওড়ায় স্পর্শকাতর পোলিং স্টেশন ৩৫৫টি এবং উলুবেড়িয়ায় ৪৯৮টি।
হাওড়া শহরে মোট ৮১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ৪ হাজার ৪৯২ রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে, উলুবেড়িয়ায় ১১১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ৪ হাজার ৮৯৪ জন রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এবার সি-ভিজিলে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে মোট ৮৭২টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ৮৪৭টি অভিযোগ সমাধান করা হয়েছে। উলুবেড়িয়ায় জমা পড়া ১ হাজার ২৭১টি অভিযোগের মধ্যে সমাধান করা হয়েছে ১ হাজার ২১৬টি।