তেল আবিব, ১৮ মে: গাজায় যুদ্ধ বন্ধে আন্তার্জাতিক মহল থেকে একাধিকার সর্তক করা হলেও সে সবের তোয়াক্কা করেনি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এবার গাজার রাফাহ শহরে হামলা বন্ধ করতে ১৩টি দেশ যৌথভাবে চিঠি দিল ইসরাইলকে। আমেরিকা ছাড়া জি–৭ অন্তর্ভুক্ত বাকি দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীরা চার পৃষ্ঠার চিঠি দিয়েছেন। এই চিঠিতে একপ্রকার সর্তক করা হয়েছে তেল আবিবকে। চিঠিতে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দিতেও ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়াও, রাফাতে বড় ধরনের সামরিক আক্রমণের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনের মত দেশগুলি।
এদিকে, হামলার তীব্রতা যতই বাড়াচ্ছে ইসরাইল, ততই প্রতিরোধ গড়ে তুলছে হামাস। ফিলিস্তিন স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর পরিকল্পিত প্রতিরোধের মুখে নাস্তানাবুদ ইসরাইলি বাহিনী। হামাসকে নির্মূল করতে গিয়ে পাল্টা বিপদে পড়েছে ইহুদি সেনারা। নির্মূল তো দূরের কথা, হামাসের প্রতিরোধ ব্যবস্থাই ভাঙতে পারছে না সেনারা। উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণ- সব প্রান্তেই তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে তারা। এদিকে হামাসকে নির্মূলের নামে ইসরাইলি বাহিনী রাফার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের উত্তর গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে। গাজা উপত্যকার উত্তর অংশেও জোরদার হামলা চালাচ্ছে ইহুদি সেনারা।
জানা গিয়েছে, ইসরাইলি হামলা থেকে জীবন বাঁচাতে গাজার বহু বাসিন্দা আশ্রয় নেয় রাফায়। শহরটি হয়ে ওঠে গাজার বাসিন্দাদের লাইফলাইন। কিন্তু সেখানেও ইসরাইলি সেনারা ব্যাপক হামলা শুরু করলে অশান্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অন্তত সাড়ে ৫ লাখের বেশি উদ্বাস্ত ফিলিস্তিনি রাফাহ শহর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। একের পর এক বিস্ফারণের আঘাতে কেঁপে উঠছে গাজা উপত্যকা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজার রাফায় অভিযানে নেমে মহাবিপদে পড়েছে ইসরাইল। হামাসকে নির্মূল করে ইসরাইলি সেনারা রাফাহ ছাড়বে বলে নেতানিয়াহু ঘোষণা দিলেও, পদে পদে হামাসের পরিকল্পিত চোরাগোপ্তা হামলায় নাস্তানাবুদ আইডিএফ। উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় ইসরাইলি সেনাদের অবস্থান সবচেয়ে কোণঠাসা। অন্যান্য অংশেও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন হামাস যোদ্ধারা। টানেল, বিধ্বস্ত ভবন আর গোপন বাঙ্কার থেকে চলছে পাল্টা জবাব। ইসরাইলি সেনারা রাফায় প্রবেশের পরই পুনরায় নিজেদের শক্তির জানান দিচ্ছে গোষ্ঠীটি। প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগেই হামাসের অস্তিত্ব নির্মূলের দাবি করেছিল তেল আবিব। তবে ইসরাইল যে তাদের কিছুই করতে পারেনি তা স্পষ্ট।
অন্যদিকে, ইসরাইলের যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে হামাস জানায়, যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইলকে আর ছাড় দেবে না তারা। শুক্রবার এক ভিডিওবার্তায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন হামাসের মুখপাত্র আবু ওবায়দা। তিনি বলেন, ‘আগ্রাসন যতই দীর্ঘস্থায়ী হোক না কেন, ফিলিস্থিনের রাফা এবং গাজার অন্যান্য স্থানে আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। শত্রুর বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।’