পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে অবশেষে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ ও দিব্য ফার্মেসির তৈরি ১৪টি ওষুধের লাইসেন্স বাতিল করার ঘোষণা দিল উত্তরাখণ্ড সরকার। সোমবার সন্ধ্যায় খবরটি প্রকাশ্যে এসেছে। কারণ এই বাতিল ঘোষণার খবর সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছে সোমবার সন্ধ্যার পর। কেননা মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতে পতঞ্জলির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলার শুনানির দিন ছিল। তার আগেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোর্টকে জানিয়ে দিল উত্তরাখণ্ড সরকার। সুপ্রিম কোর্ট এর আগে আদালত অবমাননা মামলায় উত্তরাখণ্ড সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল তারা পতঞ্জলির ভ্রমাত্মক বিজ্ঞাপন নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নিয়েছিল কি না। মঙ্গলবার আদালতে বিচারপতিদের মুখোমুখি হওয়ার আগেই পতঞ্জলির ১৪টি ওষুধের লাইসেন্স বাতিলের ঘোষণা দেয় উত্তরাখণ্ড সরকার। যেসব ওষুধের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে সেগুলি হল— (১) শ্বাসারি গোল্ড, (২) শ্বাসারি বটি, (৩) ব্রনচোম, (৪) শ্বাসারি প্রবাহ, (৫) শ্বাসারি অবলেহ, (৬) মুক্তাবটি এক্সট্রা পাওয়ার, (৭) লিপিডম, (৮) বিপি গ্রিট, (৯) মধুগ্রিট, (১০) মধুনাশিল বটি এক্সট্রা পাওয়ার, (১১) লিভামৃত অ্যাডভান্স, (১২) লিভোগ্রিট, (১৩) আই গ্রিট গোল্ড, (১৪) পতঞ্জলি দৃষ্টি আই ড্রপ।
উত্তরাখণ্ড সরকার জানিয়েছে, পতঞ্জলির ভ্রমাত্মক বিজ্ঞাপনের কারণে এই সব ওষুধের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। দিব্য ফার্মেসি পতঞ্জলির ওষুধ প্রস্তুত করে থাকে। উত্তরাখণ্ড সরকার এই নির্দেশ সব কয়টি জেলা ড্রাগ অফিসারের কাছেও পাঠিয়েছে। যোগগুরু রামেদেবের পতঞ্জলির সুবিধা করে দেওয়ার জন্য ভ্রমাত্মক বিজ্ঞাপন দেখেও নীরব ছিল উত্তরাখণ্ড সরকার । সেজন্য এদিন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননা মামলার পরেই নড়েচড়ে বসে সরকার। শীর্ষকোর্ট কেন্দ্রের তিনটি বিভাগ এবং আয়ুষ মন্ত্রকের কাছ থেকেও জবাব জানতে চেয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট ইতিপূর্বে পতঞ্জলির ভ্রমাত্মক বিজ্ঞাপন বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। তা সত্ত্বেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এবং ওষুধ বিক্রি চলতে থাকে। পতঞ্জলি তাদের বিজ্ঞাপনে আধুনিক চিকিৎসা ও অ্যালোপ্যাথি নিয়ে তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে। এমনকি অ্যালোপাথিকে ‘বেকার ও দেউলিয়া বিজ্ঞান’ আখ্যা দেয়। বিজ্ঞাপন দিয়ে কোভিড-১৯’এর ওষুধ বের করার দাবিও জানানো হয় পতঞ্জলির পক্ষ থেকে। পতঞ্জলি তাদের প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনকে রামদেবের পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছে। পতঞ্জলির অধীন রয়েছে এক ডজনের বেশি কোম্পানি।
উত্তরাখণ্ড সরকার পতঞ্জলির বিরুদ্ধে তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার বিলম্ব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ক্ষমা প্রার্থনা করে। বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি আমানুতুল্লাহর বেঞ্চ জানতে চায় কোর্টের নির্দেশের আগে সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে সেটা জানাতে হবে। আগের অফিসার কি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন, সেটাও জানাতে হবে। উল্লেখ্য, সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ছত্রছায়ায় পতঞ্জলি সুশোভিত হয়েছে। কিন্তু ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আর্জিতে পতঞ্জলি আবার সংবাদের শিরোনামে আসে। লোকসভা ভোটের আগে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয় রামদেবকেও। কিন্তু নীরব রয়েছেন বিজেপির নেতারা।