পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ২০২৪ সালের লোকসভার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই বিজেপি ও কংগ্রেস দুই যুযুধান দল তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। প্রচারেও জনসাধারণের সামনে প্রতিশ্রুতি পালনের বক্তব্য পেশ করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। তবে সত্যিই তাদের নিজ নিজ দলের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে যে ভূমিকা পালন করছে তারা, পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা প্রায় সম্পূর্ণরূপেই ব্যর্থ হয়েছে।
প্রার্থী তালিকায় যদিও ওবিসি এবং তপশিলিদের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপি কংগ্রেসকে সামান্য ছাড়িয়েছে, অন্যদিকে কংগ্রেস তপশিলি উপজাতি এবং সংখ্যালঘুদের জন্য তার পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে জায়গা তৈরি করে নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। তবে বিজেপি ও কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারের মূল এজেন্ডা প্রান্তিক মানুষের উন্নয়ন। যদিও উভয় দলই অনগ্রসর শ্রেণী এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের উৎসর্গের কথা বলেছে, তবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আদর্শ ও কৌশলের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে পার্থক্য রয়েছে।
বিজেপির এজেন্ডা সামাজিক অগ্রগতির উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিকরণের ওপর জোর, বিপরীতে কংগ্রেস তার আদর্শের মূল স্তম্ভ হিসাবে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সংখ্যালঘু অধিকারের দিকে ঝুঁকেছে। এই আদর্শগত বৈপরীত্য দুই দলের মধ্যে পার্থক্যের জন্ম দিয়েছে। দুই দলই তফসিলি জাতি (এসসি), তফসিলি উপজাতি (এসটি), অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী (ওবিসি) এবং সংখ্যালঘুদের চাহিদা মোকাবিলায় তাদের নিজ নিজ কৌশলের শ্রেষ্ঠত্বের পক্ষে নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যস্ত। আমরোহায় একটি নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি সামাজিক ন্যায়বিচারের নামে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ তুলে বিরোধীদের নিশানা করে বলেছেন, শুধুমাত্র তিনিই “জ্যোতিবা ফুলে, ডঃ বি আর আম্বেদকর, চৌধুরী চরণ সিংয়ের এর মতো সমাজ সংস্কারকদের স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হবেন।
অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি সামাজিক ন্যায়বিচারকে তার ‘জীবনের মিশন’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, যে ক্ষমতায় এলে বর্ণ শুমারি হবে দলের অগ্রাধিকার। আমি জাতপাতের প্রতি আগ্রহী নই, আমি ন্যায়বিচারে আগ্রহী’।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ ৪৩২ জন প্রার্থীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এই প্রার্থীদের একটি বিশদ বিভাজন বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীতে প্রতিনিধিত্বের একটি চিহ্ন প্রকাশ করে: ১৮৬ জন প্রার্থী সাধারণ বিভাগ থেকে এসেছেন, যা প্রায় ৪৩ শতাংশ, ১১৭ জন প্রার্থী ওবিসি বিভাগের অন্তর্গত, ২৭ শতাংশ, ৭৫ প্রার্থী তপশিলি জাতি-১৭ শতাংশ, ৪৪ প্রার্থী বা ১০ শতাংশ তপশিলি উপজাতি বিভাগ থেকে আসে এবং ১০ জন প্রার্থী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, মোট মাত্র দুই শতাংশ। কংগ্রেস দলের ঘোষিত তালিকায় ২৯৪ প্রার্থীর মধ্যে ১০৬ বা ৩৬ শতাংশ সাধারণ শ্রেণীর। ৭৩ এর মধ্যে ওবিসি প্রার্থী ২৫ শতাংশ, ৪৭ ও ৪১ তপশিলি জাতি প্রার্থী যথাক্রমে ১৬ ও ১৪ শতাংশ, সংখ্যালঘু ২৭ প্রার্থী-৯ শতাংশ।
ফলে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি ঘোষিত তালিকায় আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু প্রার্থী যথেষ্ঠ সংখ্যায় নেই, ফলে হিন্দুত্ববাদীতা প্রকাশ পাচ্ছে। ফলে বিজেপির প্রচারে মানুষের সামনে যে প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছে, তার সঙ্গে দলের আদর্শবিধির পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অপরদিকে কংগ্রেসের নির্বাচনী তালিকায় তপশিলি উপজাতি, সংখ্যালঘু যথেষ্ঠ প্রার্থী থাকলেও প্রান্তিক মানুষের নাম তালিকায় থাকছে না। ফলে কোনও না কোনও ভাবে দুই দলের প্রতিশ্রুতি থেকে কাজের মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা যাচ্ছে।