পুবের কলম প্রতিবেদক: চব্বিশের লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার প্রথমবার বাংলায় আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ দিন তিনি কোচবিহারের বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক এবং আলিপুরদুয়ারের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গার সমর্থনে কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে জনসভা করেন। প্রচন্ড রোদের গরমে গরমাগরম বক্তব্যও রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
শুধু তাই নয়, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর পাশাপাশি সিএএ নিয়েও বার্তা দেন তিনি। বিজেপি কর্মীদের দাবি, মোদিজি প্রচারে ঝড় তুলেছেন। আর দাবিকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। তিনি ভোট প্রচারে ঝড় তুলে পাশের জেলা জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে কেন নীরব থাকলেন মোদি প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের শাসকদল।
এ দিন কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানের সভা থেকে নিশীথ প্রামাণিক ও মনোজ টিগ্গাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান মোদি।বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের বঞ্চনাকে এবারের ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে অন্যতম ইস্যু করেছে তৃণমূল। আর তার পালটা দেওয়ার চেষ্টা করেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, বাংলার জন্য যা উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে আসি, তৃণমূল সরকার চালু করতে দেয় না। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প এখানে চালু করতে দেয়নি মমতার সরকার। এখান থেকে কেউ কোনও কাজে বাইরের রাজ্যে গেলে চিকিৎসার খাতে ওই প্রকল্পে টাকা পেতেন মানুষ। তৃণমূল সরকার এটা করতে দেয়নি।
অন্যদিকে বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটকে খোঁচা দিয়ে মোদি বলেন, বিরোধীদের রাজনীতি শুধু অপপ্রচারের উপরেই টিকে আছে। ‘ইন্ডিয়া’ একটা মিথ্যাচার। তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণ করে মোদি বলেন, আমি বলি, ভ্রষ্টাচার হাটাও, ওরা বলে ভ্রষ্টাচার বাঁচাও। কিন্তু মোদি দুর্নীতিগ্রস্তদের সাজা দেবেই।
সিএএ নিয়ে বাংলার মানুষকে আশ্বস্ত করে মোদি বলেন, বিজেপি সরকার সিএএ নিয়ে এসেছে। প্রতি পরিবারকে নাগরিকত্ব দেওয়া মোদির গ্যারান্টি। বাংলার প্রতি পরিবারকে বলব, তৃণমূল, বামেরা আপনাদের ভয় দেখাতে পারে। মোদি আরও বলেন, আমরা লাখপতি বানাব তিন কোটি মহিলাকে। ওঁদের ড্রোন পাইলট বানাব। এতে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পে গতি আসবে। অন্যদিকে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে মোদির হুঁশিয়ারি, সন্দেশখালির ঘটনার জন্য দায়ী একমাত্র তৃণমূল। এর জন্য তৃণমূলকে ভুগতে হবে।
মোদি তার সরকার উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে বলেন, বাংলার ৪০ লক্ষ পরিবার বাড়ি পেয়েছে। কোটি কোটি মানুষ প্রথমবার শৌচালয়, বিদ্যুৎ, জলের সংযোগ পেয়েছেন। কৃষকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি আমরা টাকা পাঠিয়েছি। ১০ বছরে যা হয়েছে, তা শুধু ‘ট্রেলার’। আরও অনেক কাজ বাকি। লোকে বলে আমার কোনও পরিবার নেই। আমার কাছে দেশই পরিবার।
বিগত চার দিন আগে রবিবার বিকেলে আচমকা ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। চারজনের মৃত্যুও হয়েছে। ঘটনার দিন উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বৃহস্পতিবার কোচবিহারে গিয়ে পড়শি দুই জেলার প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে একটি শধও খরচ করতে দেখা গেল না প্রধানমন্ত্রীকে। যা নিয়ে নিন্দা করেছে শাসকদল তৃণমূল।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ছায়া দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন। এ নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেনের কটাক্ষ, বাংলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে হোক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে হোক। আমফানের সময়েও মোদি বাংলার প্রাপ্য টাকা দেননি। সিকিমে তিস্তার বন্যার সময়ে সেখানকার সরকার টাকা পেল, কিন্তু বাংলায় সমপরিমাণ ক্ষতি সত্ত্বেও এখানে টাকা পাঠায়নি কেন্দ্র। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়কেও ছেড়ে কথা বলছে না মোদি সরকার।