পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: শিক্ষায় এগিয়ে যাক সংখ্যালঘু ছাত্ররা। সেই লক্ষ্যেই তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল বিভিন্ন সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যালঘু ধর্মের পড়ুয়াদের ভর্তির ক্ষেত্রে এতদিন যে নির্দিষ্ট সংখ্যক কোটা ছিল তা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্নাটকের কংগ্রেস পরিচালিত সিদ্দারামাইয়া সরকার।
মূলত সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের অগ্রাধিকার দিতেই এই প্রতিষ্ঠানগুলি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে সিদ্দারামাইয়া সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আশংকা তৈরি হয়েছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানগুলিতে অ-সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের সংখ্যা অচিরেই সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের সংখ্যাকে ছাপিয়ে যাবে।
ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে সংখ্যালঘু মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল তা ব্যহত হবে। রাজ্য সরকারের নিয়ম মতে, কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু মর্যাদা’ চায় সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সংখ্যালঘুদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কোটা বরাদ্দ করতে হয়। সংখ্যালঘু মর্যাদা সম্পন্ন স্কুলগুলিকে সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের (মাইনোরিটি স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত ইসলামি প্রতিষ্ঠান হলে মুসলিমদের জন্য কোটা) জন্য ২৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখতে হয়।
আর উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে, প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে, কারিগরি ও দক্ষতাবৃদ্ধি শিক্ষা ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখতে হয় সংশ্লিষ্ট সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনাকারী ম্যানেজমেন্টের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যকে সংশ্লিষ্ট সংখ্যালঘু ধর্মের থেকে নিতে হয়। উল্লেখ্য, ১৬ মার্চ রাজ্যের সংখ্যালঘু কল্যাণ দফতর এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন নিয়ম জারি করে। পাশাপাশি, সংখ্যালঘু মর্যাদাসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে সংশ্লিষ্ট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে এতদিন যে কোটা বরাদ্দ ছিল তা তুলে দেয়।
১২ মার্চ মন্ত্রিসভায় এই প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়েছিল। এই বিজ্ঞপ্তি জারির ক্ষেত্রে ইয়েদুরাপ্পা সরকারের যুক্তি ছিল- এই ধরনের সংখ্যালঘু মর্যাদাসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সংশ্লিষ্ট ধর্মের পড়ুয়াদের ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা পূরণ করতে পারছে না। যতগুলো আসন রয়েছে তত সংখ্যক সংখ্যালঘু ছাত্র খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে বহু আসন ফাঁকা পড়ে থাকছে। আর এই পদক্ষেপের নেপথ্যে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার রাজনৈতিক সচিব নাসির আহমেদ। তিনি এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান’ হিসাবে ঘোষণা করার মানদণ্ডকে শিথিল করার করার জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। ২০১১ সালের আদমশুমারির উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিটি নির্দেশ করে যে রাজ্যের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৯৬ লক্ষ ০১ হাজার তথা ১৬.২৮শতাংশ মানুষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তাদের মধ্যে ৭৮ লক্ষ ৯৪ হাজার মুসলিম, ১১ লক্ষ ৪৩ হাজার খ্রিস্টান, ৪ লক্ষ ৪ হাজার জৈন, ৯৫ হাজার বৌদ্ধ, ২৮ হাজার শিখ, ১ হাজার ১০০জন পার্সি। সরকারের বক্তব্য, রাজ্যে যেহেতু মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ এবং পার্সিদের জনসংখ্যা কম তাই সংখ্যালঘু মর্যাদাসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘোষণা করার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যায় সংক্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সচিব (সংখ্যালঘু কল্যাণ) মনোজ জৈন জানান, বিজ্ঞপ্তিটি রাজ্যের এটি মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও বিদ্যমান এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির জন্যও প্রযোজ্য হবে। দেশের সংবিধান ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তাদের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার অধিকার ও নিশ্চয়তা দেয়। পাশাপাশি, সংখ্যালঘু মর্যাদাসম্পন্ন বেসরকারী স্কুলগুলিও শিক্ষার অধিকার আইনের অধীনে সমাজের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং সুবিধাবঞ্চিত অংশের শিশুদের কোটা প্রদান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাবিদ ভি পি নিরঞ্জনারাধ্য কর্নাটক সরকারের এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন। তাঁর মতে, এটি সংবিধানের ৩০ অনুচ্ছেদের স্পষ্ট অপব্যবহার। সংবিধানে সংখ্যালঘুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার অধিকার তাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ের শিক্ষার প্রসারের জন্য প্রদান করা হয়েছিল। ‘প্রশাসন’ করার অধিকারের মধ্যে অপশাসনের অধিকার অন্তর্ভুক্ত নয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের জন্য ন্যূনতম আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান বাতিল করা মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন।