উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,সুন্দরবন: পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। একদিকে।ভারতীয় সুন্দরবন অপরদিকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক জল সীমান্ত। রায়মঙ্গল, ইছামতি, সাহেবখালি ও কালিন্দী সহ একাধিক নদী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে। এই জলপথে কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনী রয়েছে বিএসএফের। সুন্দরবনের মোট ১০৫ টি দ্বীপ রয়েছে তার মধ্যে ১০০টি মানুষজন বসবাস করে এবং ৫ টি দ্বীপ বনদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আছে। মূলত এই পাঁচটি দ্বীপকে অভয় অরণ্য চিহ্নিত করেছে বনদফতর।
ভারতে মোট ৯৬৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবনের বেশিরভাগ অংশই ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের দখলে। মূলত ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে যে আন্তর্জাতিক জলসীমা রয়েছে সেই জলসীমাকে আরো শক্তিশালী ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে এবার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মূলত খুব সহজেই সন্ত্রাসবাদীরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে এই আন্তর্জাতিক জলসীমানা পেরিয়েই অন্য দেশে অতি সহজেই প্রবেশ করে। এই অনুপ্রবেশ ঠেকাতেই এবার বিশেষ ব্যবস্থা নিতে চলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
মূলত সুন্দরবনকে সুরক্ষিত ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবার তিনটিরও বেশি ভাসমান আউটপোস্ট তৈরি করা হয়েছে। ১১০০ জনের বেশি বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের আধিকারিকেরা টহল দেবে সুন্দরবনের বিভিন্ন জঙ্গলে। এছাড়াও চল্লিশটিরও বেশি ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে গোটা সুন্দরবন জুড়ে। ইতিমধ্যেই সুন্দরবনকে সুরক্ষিত করার জন্য ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ১২ থেকে ১৪ টির এনটিভি মোতায়েন করা হয়েছে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে প্রায় ৫০ টি ছোট এবং বড় স্পিড বোটের মাধ্যমে ভারতীয় জল সীমানায় নজরদারি চালাচ্ছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স। এছাড়াও বেশ কিছু বড় জাহাজের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে। সীমান্ত বাহিনীকে ভারতের পূর্ব দিকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পুরো ৪০৯৬ কিলো মিটার পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।যার মধ্যে ২২১৬.৭ কিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত।
এই ২২১৬.৭ কিলোমিটারের মধ্যে তিনশো কিলোমিটার হল সুন্দরবনের নদীসীমানায়।এই বাহিনীটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে যাতে সুন্দরবনে অবস্থিত বন বিভাগের ‘চৌকি’তে তাদের টহল দেওয়ার দলগুলির একটি ছোট দল (পায়ে টহলরত কর্মী) স্থাপনের জন্য অনুমোদন চেয়েছে, যা দুটি জেলার অধীনে পড়ে উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ২০১৯ সালে মোট ৯টি ভাসমান আউটপোস্টের অর্ডার দিয়েছিল কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডকে। তিন ক্ষেপে তিনটি তিনটি করে এই ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট (ফ্লোটিং বর্ডার আউটপোস্ট) সরবরাহের কথা ছিল কোচিন শিপইয়ার্ডের। গত বছরের ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে তিনটি অত্যাধুনিক জাহাজ বিএসএফের হাতে তুলে দেয় কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড। সেই তিনটি তরীর নাম সীমা প্রহরী নর্মদা, সীমা প্রহরী কাবেরী ও সীমা প্রহরী সুতলেজ। এই জাহাজগুলি ৪৬ মিটার লম্বা ও ১২ মিটার চওড়া। চারটি পেট্রোলিং বা স্পিড বোট বহনে সক্ষম এই জাহাজ।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত লাগোয়া সুন্দরবনের প্রতিটি প্রান্তে গিয়ে এরা নজরদারি চালাতে পারবে। আর এদের মাধ্যমে সুন্দরবনের অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান বন্ধ করতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।