সুবিদ আবদুল্লাহ্: গাড়ি থেকে মাটিতে পা রাখতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার উপক্রম। সবুজঘেরা পরিবেশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ কয়েকটি বিল্ডিং। চারপাশের সবুজ সবজি ক্ষেত এর সৌ¨র্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পরিচ্ছন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে আরও বিস্মিত হতে হল। শুধু সাজানো অট্টালিকা নয়, ভেতরের পরিচ্ছন্নতা দেখেও যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য।
হুগলির দাদপুরে অবস্থিত ডিএমবিএইচ এডুকেশনাল হাবের তিনদিন ব্যাপী কালচারাল ফেস্টের শেষদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান। তিনি ঘুরে দেখছিলেন ক্যাম্পাস অঙ্গন। আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব উপাদানই রয়েছে এখানে।
সেক্রেটারি ওয়াসিম আকরম মণ্ডল জানালেন, ৩৫ বিঘে জমির ওপর গড়ে উঠেছে আধুনিক বিজ্ঞান পঠন-পাঠনের স্কুল, নার্সিং স্কুল ও ফার্মাসি কলেজ। রয়েছে ল্যাব, খেলার মাঠও। আর রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের জন্য আবাসিক হস্টেল। পায়ে পায়ে এগিয়ে আমরা পৌঁছলাম অনুষ্ঠান মঞ্চে। মঞ্চে তখন উপস্থিত হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া, পোলবা দাদুপর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মালতী হাঁসদা, জেলাপরিষদের সাকিলা খাতুন সরকার-সহ অনেকে।
পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান, রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ ও পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান তাঁর বক্তব্যে বলেন, জ্ঞানচর্চা যত বাড়বে, অন্ধকার তত দূর হবে। আমাদের বেশি বেশি শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার দিকে নজর দিতে হবে।
এদিন ছিল হুগলি জেলার দাদপুর ডিএমবিএইচ কলেজিয়েট স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠান। কানায় কানায় পূর্ণ উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন অভিভাবক-অভিভাবিকারা। তিনি আরও বলেন, আজ এখানে আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগে তেমন কিছু জানতাম নাম। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হাজী মুহাম্মদ আলি ও তাঁর পুত্র ডিএমবিএইচ-এর সেক্রেটারি ওয়াসিম আকরম একদিন আমার অফিসে আসেন। তাঁদের কাছে জানতে পারলাম তাঁরা শিক্ষাক্ষেত্রে কী কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন। ইচ্ছে হয়েছিল, যদি কোনও দিন সুযোগ পাই শিক্ষাকেন্দ্রটি পরিদর্শন করব। আল্লাহ্ আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় জেলার প্রশাসনিক আকিারিকরা এসেছেন। এর দ্বারা প্রমাণ হয় তাঁরা এই জেলাকে শিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যেত চান। এভাবেই বাংলা এগিয়ে যাবে। আমার ভালো লাগছে, এখানে যে মা-বাবা ও অভিভাবকরা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যাই সবথেকে বেশি। শিক্ষার জন্য মহিলারা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তখন আশা জাগে যে, সংখ্যালঘু সমাজ, পিছিয়ে পড়া দুর্বল সমাজ শিক্ষায় ব্যাপক উন্নতি করবে। এই ডিএমবিএইচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই তার প্রমাণ।
এই বাংলায় এখন বড় সংখ্যায় সংখ্যালঘু মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ডব্লুবিসিএস-এ সফল হচ্ছে। এখানে আমি বড় সংখ্যায় মা ও বোনেদের দেখে আমার ভালো লাগছে। মহিলারাই পৃথিবীতে বিপ্লবের পিছনে রয়েছে। মহিলারা যদি সংসারের হাল ধরেন ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হয়, যে কাজ পিতারা পারেন না। এ দায়িত্ব পালন করেন মহিলারা, মা ও বোনেরা। আমরা জানি, প্রফেট মুহাম্মদ সা.-এর সময় প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন একজন নারী, মা খাদিজা রা.। ইসলামের জন্য প্রথম শহিদ হয়েছিলেন মা সুমাইয়া রা.। তিনিও একজন নারী।
সব থেকে বেশি হাদিস বর্ণনাকারীও একজন নারী। উম্মুল মুমেনিন মা আয়েশা রা.। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হাজী সাহেব ও তাঁর পুত্রকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আজকে আমরা যারা শিক্ষায় পিছিয়ে আছি তাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে আপনাদের এই ডিএমবিএইচ কলেজ। আমি জেনেছি, এই কলেজ মূল্যাবোধের শিক্ষাও দেয়। এমন একটা মূল্যবোধ যা মানুষকে প্রকৃত মানুষ করে তোলে। এখানকার ছেলেমেয়েরা একদিন সুন্দর পৃথিবী গড়বে।
এদিনের সভার সূচনা পর্বে চেয়ারম্যান হাজী মুহাম্মদ আলি বলেন, আমরা শিশুদের এমন শিক্ষা দিতে চাই, যাতে তারা বিশ্ব নাগরিক হয়ে ওঠে। তিনি পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষায় এবং অন্য সব ক্ষেত্রে উৎকর্ষতার উপর জোর দিতে বলেন। এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রঞ্জন ধাড়া এবং টেকনো ইনস্টিটিউটের মিস্টার জানা।