পারিজাত মোল্লা: নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু এসএসকেএমে অপ্রয়োজনে ভর্তি হয়ে বেড দখল করে রেখেছে। যার ফলে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। রোগীরা ভর্তি হতে পাচ্ছেন না। ‘তাঁর (সুজয় ভদ্র) হাসপাতালে থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই।
আদালত হস্তক্ষেপ করুক’। এই মামলায় সব পক্ষকে নোটিস দিতে বলল হাই কোর্ট।নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিত্সাধীন তিনি। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি। এমনকী এসএসকেএমের সুপার পীযূষকুমার রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগও জানিয়েছিল ইডি।
হাসপাতালের সুপার ‘কাকু’র মেডিক্যাল রিপোর্টে কারচুপি করেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে মামলাকারীর তরফে।সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে নালিশ জানাল বিজেপি। অভিযোগ, -‘গুরুতর অসুস্থ না হয়েও এসএসকেএম হাসপাতালে শয্যা দখল করে রয়েছেন তিনি’। মামলার সব পক্ষকে নোটিস দিতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট। আইনজীবী নীলাদ্রি সাহা মঙ্গলবার এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।এদিন প্রধান বিচারপতি জানান, -‘ আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হবে’।
গত কয়েক মাস ধরে টানা এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি কালীঘাটের কাকু। নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে তাঁকে গ্রেফতার করেছে ইডি। একটি অডিয়ো ইতিমধ্যেই ইডির হাতে এসেছে। অডিয়োর কণ্ঠ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কি না? তা জানতে চায় ইডি। কিন্তু কোনওভাবেই তা আর হয়ে উঠছে না। ইডির দাবি, যখনই কাকুর কণ্ঠের নমুনা পরীক্ষার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, হয় এসএসকেএম থেকে কোনও জটিলতা তৈরি হচ্ছে কিংবা কাকু নিজে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি আদালতেও জানিয়েছে তারা।
এদিকে প্রথম থেকেই রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি কাকুর অসুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এতদিন ধরে তিনি ঠিক কোন অসুখে ভুগছেন? তা জানতে চান বঙ্গ বিজেপির নেতারা। ইতিমধ্যেই কাকুর স্বরবদলের চেষ্টার একটা অভিযোগও এসেছে বিরোধী শিবিরগুলির তরফে।আগেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি জানিয়েছেন, -‘ কালীঘাটের কাকুর ভোকাল কর্ডে একটা অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে শুনছি। গলার স্বর বদলের চেষ্টা চলছে। তাই এসএসকেএমে রাখা হচ্ছে’।
এর আগে ইডি আদালতে কাকুর অসুস্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। কণ্ঠস্বরের নমুনা নেওয়ার আগের দিনই কাকুকে এসএসকেএম আইসিইউয়ে শিফট করে দেয় বলে অভিযোগ জানায় ইডি। তারা বলে, ‘অসুস্থতা বানানো গল্প। উনি সুস্থ আছেন।’ এবার এই বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হল বিজেপি।এদিন প্রধান বিচারপতি জানান, -‘বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানি হবে’।
এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর এই বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টে। আদালতে অভিযোগ করা হয়েছিল যে, -‘ বিভিন্ন দুর্নীতিতে নাম থাকা অভিযুক্তদের আশ্রয় দিচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতাল’। রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি হাসপাতালেই চিকিত্সা পরিষেবার অপব্যবহার হচ্ছে, এমনটা দাবি করে আদালতে মামলা করার আর্জি জানান আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার। পরে একই অভিযোগ করে বিজেপির তরফেও একটি মামলা দায়ের করা হয়।প্রথম মামলাটির হলফনামায় মামলাকারী দাবি করেছিলেন, ”চিকিত্সার প্রয়োজন নেই অথচ ওই হাসপাতালে প্রভাবশালীরা বেড দখল করে রেখেছেন।
সেখানে তাঁদের কারচুপি চিকিত্সা চলছে। অসুস্থ সাধারণ মানুষ বেড পাচ্ছেন না। আশঙ্কাজনক রোগীরাও উপযুক্ত চিকিত্সা পাচ্ছেন না।” মামলাকারী আদালতে আবেদন করেন, ওই হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ‘অভিযুক্তদের’ সমস্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হোক। তা যাচাই করা হোক কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও হাসপাতালকে দিয়ে। তার পর মঙ্গলবার ‘কালীঘাটের কাকু’র ‘এসএসকেএমের শয্যা দখল’ নিয়ে হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হল বিজেপির তরফে।নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ এখন এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। ওই হাসপাতালে ‘কাকু’র চিকিত্সা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে ইডি।
আদালতে ইডি জানিয়েছে, -‘ওই হাসপাতালের উপর তাদের কোনও বিশ্বাস নেই’। এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার পীযূষকুমার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে অভিযোগও তুলেছে ইডি। ইডির দাবি, -‘পীযূষকুমার মেডিক্যাল রিপোর্টে কারচুপি করছেন’। ইডির বক্তব্য শুনে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের কাছে ‘কাকু’র চিকিত্সা সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে চেয়ে পাঠিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।এরেই মধ্যে এই বিষয়ে আরও একটি মামলা দাখিল হলো বঙ্গ বিজেপির তরফে।আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।