আহমদ হাসান ইমরানঃ জমজম কুয়োর পানিকে সারা বিশ্বে মুসলিমরা পবিত্র এবং সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করেন। এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা এবং ভারতীয় উপমহাদেশের বহু অমুসলিমও তাদের প্রতিবেশী বা বন্ধুদের নিকট থেকে নিয়ে জমজম পানি পান করে থাকেন।
আর পবিত্র হজসম্পন্ন করে যে হাজিরা ফিরে আসেন তখন তাদের কাছে স্বজনতো বটেই, পরিচিতদেরও একটি চাওয়া থাকে তা হল, ‘জমজম পানি এনেছো!’
সকলেই জানেন, জমজম কুয়োর রয়েছে একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হযরত ইব্রাহীম আ., হযরত ইসমাইল আ. এবং মা হাজেরা-র স্মৃতি।
হযরত ইব্রাহীম আ. যখন আল্লাহর নির্দেশনায় তাঁর শিশু পুত্র ইসমাইল আ. এবং স্ত্রী হাজেরাকে প্রায় বিরানভূমি মক্কায় রেখে আসেন।
সেই সময় শিশু হযরত ইসমাইল আ. প্রবল গরম ও তৃষ্ণায় অস্থির হয়ে পড়েন। মা হাজেরা কাবা শরীফের পাশে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার ছুটোছুটি করে পানির সন্ধান করতে থাকেন।
তিনি এও দেখতে থাকেন যে, কোনও বাণিজ্যিক কাফেলা তাঁদের দিকে এগিয়ে আসছে কি-না, যাদের কাছে তিনি পানি ও পথের দিশা পেতে পারেন। এই সময় শিশু ইসমাইল আ.-এর ছোট্ট পায়ের আঘাতে জমিন ভেদ করে একটি পানির ফোয়ারা উঠতে থাকে। মা হাজেরা এই পানি সংগ্রহ করে শিশু ইসমাইল আ. ও নিজের প্রাণ রক্ষা করেন। আর এই পানির ফোয়ারাই পরবর্তীতে পবিত্র জমজম কুয়ো নামে মশহুর হয়ে পড়ে।
এই জমজম কুয়ো থেকে নির্গত পানি পান করা সাওয়াবের কাজ হিসেবে পরিগণিত হয়। শুধু তাই নয়, এই পানির রয়েছে আরোগ্যকারী গুণও। আর এই কথা যুগ যুগ ধরে যেভাবে গ্রামেগঞ্জে, মুসলিম মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে যে, ঈমানদাররা এই জমজম পানিকে আরোগ্যের একটি নিদান গণ্য করে ব্যবহার করে থাকেন।
১) আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সা. জমজম পানি সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয়ই এটি আর্শীবাদপূর্ণ পানি। নিশ্চয়ই এটি তাদের জন্য খাদ্যদ্রব্যস্বরূপ যাদেরকে এটি খাওয়ানো হয়ে থাকে (দরিদ্র)। এছাড়া এই পানি ব্যাধির জন্যও উপশমকারী।
২) হযরত জাবির রা. এক হাদিসের বর্ণনায় বলেছেন, জমজমের পানি যে উদ্দেশে পান করা হয়, সেজন্যই উপযোগী।
৩) বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সা. একটি পাত্রে জমজমের পানি বহন করতেন, চামড়ার মশকও তিনি এজন্য ব্যবহার করতেন। এই থেকে তিনি রোগাক্রান্তদের গায়ে জমজম পানি ছিটিয়ে দিতেন এবং খানিকটা পান করতে দিতেন।
হযরত ইবনে আল কাইইম (আল্লাহ্ তাঁর উপর করুণা বর্ষণ করুন) বলেছেন, আমি নিজে এবং অন্যরা জমজমের পানি আরোগ্য লাভের আশায় আস্বাদন করলাম। আর তা আমাদেরকে এক বিস্ময়কর ফল দিল। আমি জমজমের পানি ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগ আরোগ্যের চেষ্টা করতাম। আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তারা আরোগ্য লাভ করত।