মাওলানা আবদুল মান্নান
ইসলামী জীবন-বিধানে অন্যতম মৌলিক ভিত্তি ও অবশ্য পালনীয় (ফরয) ইবাদাত হচ্ছে যাকাত। কিন্তু যাকাত ও হজ শুধুমাত্র অর্থ সম্পদের দিক দিয়ে সামর্থ্যবান মুসলমানদের উপর ফরয। যাকাত আর্থিক ইবাদাত, হজ দৈহিক ও আর্থিক দুটোই।
‘যাকাত’ আরবি শধ। এর অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা, ক্রম বৃদ্ধি, আধিক্য ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ হল ধনীদের সম্পদে আল্লাহর নির্ধারিত অবশ্য প্রদেয় অংশকে বোঝায়। আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কুরআনে সম্পদশালীদের সম্পদে নির্ধারিত ৮টি খাতে যাকাত ব্যয় বণ্টন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআন মজীদে আল্লাহ্পাক বলেছেন ‘তোমরা সালাত কায়েম করো, এরপর যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ্কে দাও উত্তম ঋণ। তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য ভালো যা কিছু পূর্বাহ্নে সঞ্চয় করবে তোমরা তা আল্লাহ্র নিকটে উৎকৃষ্টতর রূপে এবং পুরস্কার হিসাবে বর্ধিত পরিমাণে পাবে। তোমরা ক্ষমতা প্রার্থনা কর আল্লাহ্র নিকট, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা মুযাম্মিল, আয়াত ২০)
রোযা যেমন দেহের পরিশুদ্ধতাকারী, যাকাত তেমন অর্জিত ধন-সম্পদের পবিত্রতাকারী। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন রাসূল হযরত মুহাম্মদ সা.-কে ধনীদের সম্পদ হতে যাকাত গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। ‘তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।’ (সূরা তাওবা, আয়াত ১০৩)
সূরা রূমের ৩৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে n ‘তোমরা মানুষের সম্পদ বৃদ্ধির নিমিত্তে যে সুদভিত্তিক লেন-দেন করে থাক, প্রকৃত পক্ষে তা আল্লাহ্ নিকটে কোনও লেন-দেন নয়। পক্ষান্তরে তোমরা যে যাকাত প্রদান করে থাক আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের আশায় তা বৃদ্ধি পায়। মূলত যাকাত প্রদানকারীগণ যাকাতে প্রদেয় অর্থের পরিমানকে বের করেও দ্বিগুণ করে নেয়। যাকাত না দেওয়ার পরিণতি সম্পর্কে নবী করীম সা. বলেছেন ‘যাকাত যে সম্পদের সঙ্গে মিশ্রিত হয় সেই (মাল) সম্পদকে যাকাত অবশ্যই ধ্বংস করে দেয়।’ (মিশকাত)
অপর একটি হাদীসে বলা হয়েছে ‘স্থল ও জলভাগে ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয় শুধু সম্পদ জমা রাখার জন্য।’ বিশেষ করে গরিব মানুষ, দিন মজুর, যার দিন আনে দিন ‘খায় তারা সব থেকে বেশি সংকটের মধ্যে থাকেন। ভুললে চলবে না যে তারাও আমাদের ভাই। তাই শুধুমাত্র যাকাতের নির্ধারিত অংশ ব্যয় করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। সম্পদ আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহ বা দান। য’নই সুযোগ বা সামর্থ হবে, ত’নই তা আল্লাহ্র পথে হৃদয় ‘খুলে দুই হাত প্রসারিত করে দান করা সকলের কর্তব্য।
নবী করীম সা.-এর নিকট সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন ‘আল্লাহ্র কাছে কে সবচেয়ে প্রিয়? বলেন যিনি সৃষ্টি- জীবের প্রতি সবচেয়ে বেশি উপকারী, তিনিই। সব সৃষ্টি জীবই আল্লাহ্ পরিবারভুক্ত, যিনি সৃষ্ট-জীবের প্রতি সবচেয়ে বেশি উপকার করতে চেষ্টা করেন, আল্লাহ্র নিকট— তিনিই প্রিয়তম (হাদীস)।’
‘গোপন দান আল্লাহ্র ক্রোধ উপশম করে।’ (হাদীস)
দানের সত্যিকার প্রার্থিত উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আল্লাহ্পাক আমাদের সকলকে সামর্থ দান করুন। আমীন!