পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: দেহের সার্বিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম। অনিদ্রা ও পরিমিত ঘুমের অভাব ডেকে আনে হৃদযন্ত্রের সমস্যা, স্নায়ুর রোগ, স্থূলতা, দুর্বলতার মতো অজস্র ব্যাধি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের প্রয়োজন। অনেকেই আছেন যাঁরা বিছানায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু কেউ কেউ আছেন যাঁদের ঘুম না হওয়া, অস্থিরতার মতো সমস্যা রয়েছে। নিশ্চিন্তে ঘুমের জন্য অনেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কাঁড়ি কাঁড়ি ওষুধ খান। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুমের সঙ্গে কৃত্রিম ওষুধের ঘুমের তুলনা কি চলে? তাহলে কী করবেন? অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করে বেশ কয়েকটি উপায়ের সন্ধান দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রাতে ঘুমানোর আগে কয়েকটি পানীয় খেলে এই সমস্যা দূর হবে দ্রুত।
১ গ্রিন টি: গ্রিন টি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী এ নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। রাতে ঘুমের আগে গ্রিন টি-এর সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে পান করুন। বাড়িতে গ্রিন টি না থাকলে হালকা গরম পানিতে মধু মিশিয়েও পান করতে পারেন। মধুতে থাকে প্রচুর ট্রিপ্টোফান। প্রতি রাতে এই পানীয় পান করলে ঘুম নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
২ ক্যামোমাইল টি: ঘুমের ক্ষেত্রে আরেকটি সহায়ক পানীয় হতে পারে ক্যামোমাইল টি। প্রতি রাতে ঘুমের আগে পান করলে উপকার পাবেন। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের স্নায়ুকে শিথিল করে দেয়। ফলে অনেক হালকা বোধ হয় এবং ঘুম নেমে আসে। এই চা পান করে ঘুমাতে গেলে সকালেও সতেজ অনুভব করবেন।
৩ অশ্বগন্ধা: ভালো ঘুম হতে ব্যবহার করতে পারেন অশ্বগন্ধাও। এটি ভারতীয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসার প্রাচীন ভেষজ। শরীর এবং মনকে শিথিল করে চোখে ঘুম নামাতে এটি সিদ্ধহস্ত। গরম জলে অশ্বগন্ধার মূল ভিজিয়ে সেই জলটি নিয়মিত পান করুন। স্বাভাবিক নিয়মেই ঘুম আসবে।
৪ কেশর: রান্নার মশলা কিংবা ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা করতে কেশরের জুড়ি মেলা ভার। একইভাবে চোখে ঘুম আনতেও ওস্তাদ কেশর। এক চামচ মধু এবং সামান্য ঘি-তে একটি বা দুটি কেশরের পাঁপড়ি মিশিয়ে খেয়ে নিন। স্ট্রেস কমবে। ভালো ঘুম হবে। গর্ভবতীরা কিন্তু একেবারেই কেশর খাবেন না।
৫ আমন্ডের দুধ: আপনার যদি দুধ পানে কোনো ধরনের সমস্যা থাকে যেমন অ্যালার্জি বা ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স ইত্যাদি, তাহলে পান করতে পারেন আমন্ডের দুধ। এতেও থাকে প্রচুর ট্রিপ্টোফান। সেইসঙ্গে থাকে প্রচুর ম্যাগনেশিয়ামও। এটি শরীরের মাংসপেশি শিথিল করে এবং আরাম জোগায়। ফলে ভালো ঘুম হয়।
৬ চেরি: মেলাটোনিনে সমৃদ্ধ। যা শরীরের অভ্যন্তরীণ চক্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঘুমানোর আগে এক মুঠো চেরি খাওয়া ভাল ঘুমের সহায়ক। চেরির রস বা জুসও খাওয়া যেতে পারে। যদি তাজা চেরি পাওয়া না যায়, তবে ফ্রিজে রাখা চেরিও উপকারী প্রমাণিত হবে।
৭ হার্বাল টি বা ভেষজ চা: ভাল ঘুমের জন্য ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলাই ভাল। তবে আপনি যদি রাতে ঘুমানোর আগে ভেষজ চা পান করেন, তাহলে আপনি নিজের জন্য ভাল ঘুমের ব্যবস্থা করেন।
* বয়স : ঘুমের চাহিদা (২৪ ঘণ্টায়)
* নবজাতক (০-৩ মাস) : ১৪-১৭ ঘণ্টা
* শিশু (৪-১২ মাস) : ১২-১৬ ঘণ্টা
* বাচ্চা (১-২ বছর) : ১১-১৪ ঘণ্টা
* প্রি-স্কুল (৩-৫ বছর) : ১০-১৩ ঘণ্টা
* স্কুল বয়সের শিশু (৬-১২ বছর) : ৯-১২ ঘণ্টা
* কিশোর (১৩-১৮ বছর) : ৮-১০ ঘণ্টা
* প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৬৪ বছর) : প্রতি রাতে ৭-৯ ঘণ্টা
* প্রাপ্তবয়স্ক (৬৫+ বছর) : প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা
প্রত্যেক মানুষের রাতে ৬–৭ ঘণ্টার নির্বিঘ্ন ঘুম দরকার। এই ভালো ঘুমের জন্য চাই একটি ইতিবাচক পরিবেশ এবং কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা।
কিছু পরামর্শ
- প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যান এবং একই সময় ঘুম থেকে উঠুন। ছুটির দিনগুলোতেও ঘুমের একই রুটিন বজায় রাখুন।
- নিকোটিন, কফি ও অ্যালকোহল সন্ধ্যায় পরিহার করুন। এসব উত্তেজক দ্রব্য ব্যক্তিকে জাগ্রত রাখে। কফি পান করলেও ঘুমের আট ঘণ্টা আগে করতে হবে। কারণ, পান করার অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত এর প্রভাব থাকে।
- প্রতিদিন অল্পবিস্তর ব্যায়াম করুন। প্রতিদিনের হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম আপনাকে একটা অচ্ছেদ্য ঘুম উপহার দিতে পারে। অ্যারোবিক ব্যায়াম হলো সেই ধরনের ব্যায়াম, যার ফলে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় এবং শরীর ঘামতে শুরু করে। যেমন: জোরে হাঁটা, সাইকেল চালানো, দড়িলাফ, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।
- সাধারণত রাতেই ঘুমাবেন। দুপুরের ঘুম কিন্তু রাতের বিশ্রামকে কেড়ে নিতে পারে। দুপুরে ভাতঘুম যদি নিতে হয়, তবে সেটি আধা ঘণ্টার বেশি নয়।
- ঘুমের ওষুধ শুধু শেষ অবলম্বন হিসেবে রাখুন। চিকিৎসকের পরামর্শেই শুধু ঘুমের ওষুধ খেতে পারেন। কখনোই নিজে নিজে খাবেন না।