পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বেশ কয়েকদিন ধরেই তীব্র দাহদাহে পুড়ছে গোটা বাংলা। এপ্রিল মাসের প্রায় দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই সূর্যের প্রখর তেজে নগরবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত। কখনও তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৪১ ডিগ্রিতে আবার কখন ৪৩ ডিগ্রির বেশি। আলিপুর আবহাওয়া দফতর আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল যে, এবছর তাপমাত্রা বেশি হবে। সেই সতর্কতাকে সত্যি করেই বেশ কয়েকদিন ধরেই তীব্র তাপপ্রবাহ চলল কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গে আশেপাশে অঞ্চলে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোথাও বিদ্যুৎ বিভ্রাট কোথাও আবার পানীয় জলের সংকট। তার মধ্যেই সামনে এল জলাশয় শুমারির রিপোর্ট। জলশক্তি মন্ত্রক থেকে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, জলাশয় সংখ্যার নিরিখে শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সমীক্ষা অনুসারে দেখা গিয়েছে, ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে সর্বাধিক জলাশয়ের সংখ্যা। যা মোট ৭,৪৭,৪৮০টি। এর পরই রয়েছে উত্তর প্রদেশ (২,৪৫,০৮৭), অন্ধ্র প্রদেশ (১,৯০,৭৭৭), ওড়িশা (১,৮১,৮৩৭), আসাম (১,৭২,৪৯২), ঝাড়খণ্ড (১,০৭,৫৯৮) ও তামিলনাড়ু (১,০৬,৯৫৭)। সবচেয়ে কম জলাশয় রয়েছে সিকিমে যা মাত্র ১৩৪টি।
এই জলাশয় শুমারির লক্ষ্য দেশের সমস্ত জলাশয়ের আকার, অবস্থা, দখল বা বুজিয়ে ফেলা, সঞ্চয় ক্ষমতা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির তথ্য সংগ্রহ করে একটি জাতীয় ডাটাবেস তৈরি করা। শহর ও গ্রাম উভয় অঞ্চলই এই শুমারিটির অধীনে ছিল। একটি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে জলাশয়ের ছবিসহ অন্যান্য সকল তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
জলাশয় শুমারির রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ২৪.২৪ লক্ষ জলাশয়ের মধ্যে ৯৭.১ শতাংশ বা ২৩.৫৫ লক্ষ গ্রামীণ এলাকায় এবং মাত্র ২.৯ শতাংশ বা ৬৯,৪৮৫টি শহরাঞ্চলে রয়েছে। জলাশয়ের ৫৯.৫ শতাংশ পুকুর, তারপরে ট্যাঙ্ক (১৫.৭ শতাংশ), জলাধার (১২.১ শতাংশ), জল সংরক্ষণ প্রকল্প/পার্কোলেশন ট্যাঙ্ক/চেক ড্যাম (৯.৩ শতাংশ), হ্রদ (০.৯ শতাংশ), এবং অন্যান্য (২.৫ শতাংশ)।
সর্বাধিক পুকুর এবং জলাশয়ের থাকার কারণে তালিকার শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে অন্ধ্র প্রদেশে সর্বাধিক ট্যাঙ্ক রয়েছে এবং তামিলনাড়ুতে সর্বাধিক হ্রদ রয়েছে। এছাড়াও, ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, জল সংরক্ষণ প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্র সারা দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় রাজ্য।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী আরও দেখা গিয়েছে যে মোট জলাশয়ের ৮৩.৭ শতাংশ জলাশয় মাছ চাষ, সেচের কাজ, গার্হস্থ্য প্রয়োজনে ও পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকি ১৬.৩ শতাংশ জলাশয় বিভিন্ন কারণে অব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠেছে। তার মধ্যে শুকিয়ে যাওয়া, পুকুর বা জলাশয় বুজিয়ে নির্মাণ কাজ, পলি, লবণাক্ততা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, শুধুমাত্র গ্রামীণ বা শহর এলাকাই নয়, মোট জলাশয়ের ৯.৬ শতাংশ জলাশয় উপজাতীয় এলাকায়, ৮.৮ শতাংশ বন্যাপ্রবণ এলাকায়, ৭.২ শতাংশ “খরা প্রবণ এলাকা কর্মসূচির” অধীনে এবং ২ শতাংশ নকশাল-প্রবণ এলাকায় অবস্থিত।
উল্লেখযোগ্য ছিল তা হল, পুকুর বা জলাশয় ভরাট হচ্ছে কি না তা জানতে সরাসরি নজরদারির জন্য ‘ড্রোন’ ব্যবহারের উল্লেখ। শুধুমাত্র নজরদারি চালাতে সপ্তাহে সাত দিন, ২৪ ঘণ্টার একটি ‘ডেডিকেটেড’ কন্ট্রোল রুমের কথাও বলা হয়েছিল। ওই কন্ট্রোল রুমে বসে ড্রোনের মাধ্যমে ‘রিয়্যাল টাইম’ পরিস্থিতি দেখা সম্ভব হবে। আরও বলা হয়েছিল, পুরসভার ‘পরিবেশ ও ঐতিহ্য’ বিভাগের অস্থায়ী কর্মীদের সাইকেল দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা সরেজমিন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যেতে পারেন।
কিন্তু ওই নির্দেশিকা জারির দেড় বছর পরে দেখা যাচ্ছে, ড্রোনে নজরদারি, জলাশয় সংরক্ষণের জন্য ‘ডেডিকেটেড’ কন্ট্রোল রুম, সরেজমিন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যেতে অস্থায়ী কর্মীদের সাইকেল দেওয়া-সহ জলতন্ত্রের অনেক শর্তই পূরণ করা হয়নি।