পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ জলপথই যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম লাক্ষাদীপে। কেউ জলপথ পরিবহনে চেপে এখান থেকে কোচিতে যায়– কেউবা যায় ম্যাঙ্গালোরে– কেউ বা অন্যত্র। আরব সাগরের বুকে চলা জলপথ পরিবহনেই স্কুল-কলেজ– হাসপাতাল– অফিসে যায় এখানকার মানুষজন। হঠাৎ এই পরিবহনের ভাড়া দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছে। কবরত্তি থেকে কোচি যেতে আগে ন্যূনতম ভাড়া ছিল ২২০ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে ৩৩০ টাকা। একই দূরত্বে দ্বিতীয় শ্রণিতে ভাড়া ছিল ৬৫০ টাকা। তা হয়েছে ১৩০০ টাকা। প্রথম শ্রেণিতে ভাড়া ছিল ২৩৪০ টাকা– তা বেড়ে হয়েছে ৩৫১০ টাকা। ভিআইপি শ্রেণির ভাড়া ধরাছোঁয়ার বাইরে। করা হয়েছে ৬১০০ টাকা।
একে অতিমারিতে মানুষজনের আয় কমেছে। সেখানে এত ভাড়া বাড়ায় অনেকের স্কুল-কলেজ যাওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দ্বীপ রাজ্যের কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে যদি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয় তার ভাড়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা– যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা দুঃসাধ্য। এই কারণে এখানকার মানুষজন ক্ষুব্ধ। সকলেই ভাড়া কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এখানকার একমাত্র সাংসদ এনসিপির মুহাম্মদ ফয়সলও বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। এই কারণে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর করেছে। তা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন সাংসদ। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য– কীভাবে চাপ দিয়ে ভাড়া কমানো যায়। আগে এখানে যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি ছিল তার কর্মীদের ব্যাপক হারে ছাঁটাই করায় এখানকার মানুষজন এখন চিকিৎসার জন্য ম্যাঙ্গালোর বা কোচির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।
সাংসদ ফয়সল প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছেন– যে কোনও এলাকার নাগরিকদের যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ রাখার দায় কেন্দ্রীয় সরকারের। এখানকার পরিবহন লাভক্ষতির ভিত্তিতে কখনও চলেনি– চিরকালই এটিকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে গণ্য করে এসেছে সব কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ এখানে আর কোনও বিকল্প পরিবহন নেই। আগে রাজ্যে এক পরিবহন কমিটি ছিল। ভাড়া পরিবর্তনের দরকার হলে সেই কমিটির মত নেওয়া হত। এখন সেই কমিটি তুলে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আগে যখন ভাড়া বেড়েছে– জরুরি চিকিৎসার কাজে রোগিকে নিয়ে যাওয়ার ভাড়ায় কখনও হাত দেওয়া হয়নি। এবার তাও অসম্ভব বাড়ানো হয়েছে।
ফয়সল লিখেছেন– এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থারও দফারফা করেছে কেন্দ্র। বহুকাল পড়ুয়াদের স্কলারশিপ আটকে রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ বহুকাল। স্টাডি ট্যুর সেই যে অতিমারির কারণে বন্ধ হয়েছে আজও চালু হয়নি। এর প্রতিবাদে হালে সমস্ত স্কুলে পড়ুয়ারা একদিনের ধর্মঘটে সামিল হয় এনসিপির ডাকে। এরপর শিক্ষা সচিব প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়ে বলেছেন– কোন কোন পড়ুয়া ধর্মঘটে সামিল হয়েছে তাদের নামের তালিকা যেন পেশ করা হয়। যে সব পড়ুয়া ধর্মঘটের দিন স্কুলে যায়নি তাদের অভিভাবকদের ডেকে বণ্ড দিয়ে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। পুলিশও বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে।
লাক্ষাদীপ ছাত্র সমিতির সভাপতি আনিস বললেন– প্রফুল্ল প্যাটেল নামে এক গুজরাটি আইএএস এখানকার প্রশাসক হয়ে আসার পর থেকেই দমনপীড়ন শুরু হয়েছে। স্কুল শিক্ষকদের ঠিকার ভিত্তিতে নেওয়া হলেও মাসে ২০ হাজার টাকা আগে দেওয়া হত। উনি এসে তা কমিয়ে ৮০০০ টাকা করে দিয়েছেন। সমস্ত ক্ষেত্রেরই ঠিকা কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়েছে গণহারে।
এতকাল কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের এখানকার তিন কেন্দ্রে পড়ুয়ারা পড়াশোনা করত। গত সপ্তাহেই এক নির্দেশে কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কালিকট বিশ্ববিদ্যায়ের পরিবর্তে পুডুচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক তৈরি করা হয়েছে। কারণ পুডুচেরিতে বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতাসীন। আর কেরলে বাম সরকার রয়েছে।
মুসলিম অধ্যুষিত এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯৮ শতাংশ মানুষই মুসলিম। তাই এখানে দুটির বেশি সন্তান থাকলে ভোটে দাঁড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গোহত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জমি কেনাবেচায় আগের সব নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়েছে। মাত্র ৭০ হাজার জনসংখ্যার এই দ্বীপ রাজ্য এখন মহাসঙ্কটে। এখানে অতিমারির সংক্রমণ খুবই কম। প্যাটেল প্রশাসক হয়ে আসার পর থেকেই লাক্ষাদ্বীপের মানুষজন চাপের মধ্যে পড়ছেন। তাঁদের প্রশ্ন– মুসলিম বলেই কি লাক্ষাদ্বীপের দিকে নজর কেন্দ্রীয় সরকারের শাসক দলের? এখানকার জনসংখ্যার চরিত্র (ডেমোগ্র্যাফি) বদলে দিতে চাইছে কেন্দ্র। পাশের রাজ্যগুলি থেকে মানুষজনকে আনা হচ্ছে এখানে। এনে পাকাপাকিভাবে তাঁদের থাকার এবং ব্যবসায়ের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।