পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: রাতের আকাশে গ্রহ-নক্ষত্রের কী কাণ্ড ঘটছে দেখতে অধীর আগ্রহে বসে বসে থাকতে দেখা গেছে অনেককেই। এবার রাজ্যপালের সিদ্ধান্তে নজর রাখতে রাত জেগে বসে থাকার নিদান দিচ্ছেন রাজ্যপাল নিজেই। এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের চর্চা এখন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপালের বিভিন্ন কার্যকলাপে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ অধ্যাপক থেকে বিশিষ্ট মহল।
উল্লেখ্য, শুক্রবার বিকাশভবনে রেজিস্টারদের নিয়ে বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, রাজ্যপাল ‘তুঘলঘি’ আচরণ করছেন। ‘উনি’ একদিকে বিচারক, আবার অন্যদিকে ফাঁসুরে। রাজ্যপাল নিজেই অভিযোগ তুলে বিচার করছেন, আবার ফাঁসিও দিচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে পাল্টা হুশিয়ারি দিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেছেন, আজ রাতের মধ্যে কী করি দেখুন।
শনিবার বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল বোস বলেন, ‘আমার কাজে আমি খুশি। আজ মধ্যরাতের মধ্যে কী পদক্ষেপ করি দেখুন।’
শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘আগে ওনাকে আলাউদ্দিন খিলজি ভাবতাম, এখন দেখছি উনি বিন তুঘলক। রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতে দু-পক্ষের সঙ্গেই দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে বাম ও কংগ্রেস। তাদের দাবি, এই সংঘাতের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির।
উপাচার্য নিয়োগের একচ্ছত্র এক্তিয়ার রয়েছে রাজ্যপালের। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর রাজ্যের ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল বোস। রাজ্যের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন ব্যক্তিদের উপাচার্য পদে বসানোর হয়েছে। এই নিয়ে আইনি পদক্ষেপ করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে জবর ধাক্কা খাওয়ার পর ফের আদালতে যাওয়ার সাহস এখনো দেখিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
রাজ্যপালের সেই মন্তব্যের পরই পাল্টা টুইট করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করার যে হুঁশিয়ারি রাজ্যপাল দিয়েছেন, তা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন ব্রাত্য বসু। আর নাম না করে রাজ্যপালকে ‘ভ্যাম্পায়ার’এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
রাজ্যপাল বলেছেন, আজ মধ্যরাতের মধ্যে কী পদক্ষেপ করি দেখুন। কী হয় তা দেখার জন্য মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’
এদিকে রাজ্যপালের পালটা মন্তব্যে শুরু হয়েছে নতুন গুঞ্জন। তবে কী পদক্ষেপ করতে চলেছেন রাজ্যপাল, সেটা জানতে মাঝরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। তিনি কি রাজ্য নিযুক্ত সমস্ত উপাচার্যকেই বরখাস্ত করতে চলেছেন, না কি শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছেন, উঠছে প্রশ্ন। তবে পাল্টা জবাব দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীও। আসলে শিক্ষা দফতরকে এড়িয়ে রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘাত চরমে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীও কয়েকদিন আগে রাজ্যপালকে আক্রমণ করেছিলেন।
একটি টুইট করে শিক্ষামন্ত্রী লিখেছেন, রাক্ষস প্রহরের জন্য অধীর অপেক্ষা করে রয়েছি। সাবধান, সাবধান, সাবধান! শহরে নতুন ভ্যাম্পায়ার এসেছে। শহরবাসী নিজেদের খেয়াল রাখুন। ভারতীয় পুরাণ মতে রাক্ষস প্রহরের জন্য অপেক্ষায় আছি।’
শুক্রবার রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারদের বৈঠকে ডেকেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কিন্তু সেখানেও কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আসেননি। ওই বৈঠক শেষে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরব হন শিক্ষামন্ত্রী। রাজভবন থেকে অনেক রেজিস্ট্রারকে বৈঠকে না যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে বলেও ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। আর রাজ্যপালের কাজকর্মকে ‘তুঘলকীয়’ বলেও মন্তব্য করেন।