পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: একবছর বা তার বেশি সময় ধরে বসবাসকারী জম্মুর যেকোনও ব্যক্তিকে ভোটাধিকার দেওয়ার কথা বুধবার ঘোষণা করেছিলেন জেলা নির্বাচনী আধিকারিক অবনী লাভাসা।
সেইমতো জম্মুতে একবছর বা তার থেকে বেশি সময় ধরে বসবাসকারী ব্যক্তিদের রেসিডেন্স সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য তহশিলদার (রেভিনিউ অফিসার)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের এই ঘোষণার পরই শুরু হয় বিতর্ক। বিজেপি বাদে সব রাজনৈতিক দল এর বিরুদ্ধে সরব হয়। প্রবল রাজনৈতিক প্রতিবাদের কারণে মাত্র একদিনের মধ্যেই সেই আদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেন জম্মুর ডেপুটি কমিশনার তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিক লাভাসা।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলা নির্বাচনী অফিসের এক আধিকারিক জানান, ‘নির্দেশিকাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।’ তবে প্রত্যাহারের কারণ নিয়ে কোনও কিছু জানানো হয়নি।
এভাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার সম্পর্কে সিপিআইএম নেতা এম ওয়াই তারিগামি বলেন, কেন এই ধরনের নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল সেটাই প্রথম জানাতে হবে।
গুপকার জোটের এক নেতা বলেন, সত্যিই যদি নির্দেশিকাটি প্রত্যাহার করা হয়ে থাকে, তাহলে তার একটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।
বুুধবার অবনী লাভাসার কার্যালয় থেকে একটি আদেশ জারি করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, জম্মু জেলায় একবছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাসকারীরা সংশ্লিষ্ট জেলার ভোটার হিসেবে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
আধার কার্ড, জল, বিদ্যুৎ বা গ্যাসের সংযোগ, ব্যাঙ্কের পাসবুক, পাসপোর্ট, জমির দলিলের মতো নথি বসবাসের প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে। এই আদেশ জারির পরই জম্মু ও কাশ্মীরের মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলি এই আদেশের বিরোধিতা শুরু করে। বিতর্কের মুখে তড়িঘড়ি এই আদেশ প্রত্যাবার করা হল।
গত আগস্ট মাস থেকেই জম্মু-কাশ্মীরে বাইরে থেকে আসা ‘বহিরাগত’দের ভোটাধিকার পাওয়া নিয়ে বিতর্ক চলছে। তৎকালীন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক হৃদেশ কুমার জানিয়েছিলেন, জম্মু-কাশ্মীরের পুরনো বাসিন্দা না হলেও কর্মসূত্রে বা পড়াশোনার জন্য যাঁরা উপত্যকায় বসবাস করেন, তাঁরাও ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারবেন।
সেই সময়ই মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলি অভিযোগ করেছিল, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রকৃত বাসিন্দারা তাদের ভোট দেবে না বুঝেই, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অস্থায়ী ভোটারদের উপর নির্ভর করতে চাইছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা ভেঙে দিয়েছিলেন, তৎকালীন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক।
তারপর ২০১৯ সালের অগস্টে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করা হয়েছিল। রাজ্য ভেঙে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়। চলতি বছরের মে মাসে, জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ হয়। সেই সময়ে আশা করা হয়েছিল, চলতি বছরেই জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচন করা হবে। কিন্তু সীমানা পুনর্বিন্যাসের মতো চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশকে ঘিরেও চূড়ান্ত বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ফলে, বিধানসভা নির্বাচনের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের আরও অন্তত এক বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।