পুবের কলম প্রতিবেদক: রবিবার বিকালে আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের আয়োজনে বিশিষ্ট তিনজনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেই অনুষ্ঠানেই সমাজ সচেতনতা ও ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে নিজেদের মত ব্যক্ত করেন বিশিষ্টরা। এ দিন সমাজ সচেতনতা ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং বিজ্ঞানের উপর অসামান্য অবদানের জন্য বিশিষ্ট তিনজনকে সংবর্ধিত করা হয়। একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি বইয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশিষ্টরা। সংবর্ধিত হন বিশিষ্ট সমাজ-সংগঠক, সাংবাদিক ও লেখক নাসীর আহমদ, বিশিষ্ট ইতিহাস-চিন্তক বিশ্বেন্দু নন্দ এবং বিজ্ঞান গবেষক অধ্যাপক মেহেদী কালাম।
এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ও দৈনিক পুর্বের কলম-এর সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, সমাজসেবী মুহাম্মদ খলিল প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির ভাষণে আহমদ হাসান ইমরান সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস চর্চায় ‘আলিয়া সংস্কৃতি সংসদ’এর দীর্ঘদিনের কাজের প্রশংসা করেন। ইমরান বলেন, আমজাদ সাহেব ও সাইফুল্লাহ ভাইদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আলিয়া সংস্কৃতি সংসদ অনেক বড় কাজ করছে। এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের সবাইকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
১৯৪৭-এ দেশভাগের সময় এদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেই শূন্যতা পূরণে নাসীর আহমদ সাহেব বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন ইমরান। কলম পরিবারকে কেন্দ্র করে তাঁর কাজ সম্পর্কেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ইমরান। তারপরই তিনি বলেন, ইসলাম-ফোবিয়া ছাড়াচ্ছে চারিদিকে। এ নিয়ে মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে। এই ফোবিয়া দূর করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে সংবর্ধনা গ্রহণের পর সংক্ষিপ্ত ভাষণে নাসীর আহমদ পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতের সংক্ষিপ্ত অংশ তুলে ধরে উল্লেখ করেন, সম্মান প্রদান করা এবং সম্মান তুলে নেওয়ার একমাত্র মালিক আল্লাহ্তায়ালা। তাই সবাইকে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
তাঁর কথায়, সমাজ, সংস্কৃতি ও দেশের জন্যে কাজ করে যেতে হবে। এর মাধ্যমেও আল্লহ্র সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব। এছাড়াও ড. মেহেদী কালাম তাঁর গবেষণার বিষয় সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন।
অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে হরিয়ানার নুহ্ বা মনিপুরে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সাবাইকে সচেতন হতে হবে। পিছিয়েপড়া মুসলিমদের এগিয়ে নিয়ে যেতে সমাজের মধ্য থেকেই উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন মেহেদী কালাম।
আর এক বিশিষ্টজন ও সংবর্ধনা প্রাপক বিশ্বেন্দু নন্দ দেশের ইতিহাস চর্চার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রতিষ্ঠানিক ইতিহাস চর্চা হয় তা একটি নির্দিষ্ট প্রকোষ্ঠের মধ্যে মানুষকে ঢুকিয়ে দেয়। এই চর্চার জগত অত্যন্ত ছোট এবং যারা এই ইতিহাস রচনা করেছেন সবাই ইসলাম-ফোবিয়া বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্তমূলক কাজ করে গিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি যদুনাথ সরকারের নামও তুলে আনেন। তিনি বলেন, ঔরঙ্গজেব থেকে শুরু করে মোদি জামানা পর্যন্ত মানুষের মননকে সঠিক ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কথা বা ইতিহাস কেউ লিখবে না তাই আমাদেরকেই উদ্যোগী হতে হবে। ইসলামোফোবিয়া রুখতে আরও বেশি বেশি করে প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরের বাইরে ইতিহাস নিয়ে চর্চা দরকার। সবাইকে এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিনের অনুষ্ঠানে বড় ভূমিকা পালন করেন অধ্যাপক রেজাউল করিম অধ্যাপক সাইফুল্লাহ, হাফিজুর রহমান, শামসুল আলম প্রমুখ। অন্যদিকে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন তথ্যচিত্র নির্মাতা মুজিবর রহমান, কবি হাসনাইন, সুরাইয়া পারভিন প্রমুখ।
দর্শকাসনে বহু বিশিষ্ট মানুষ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রাক্তন আমলা আরফান আলী বিশ্বাস, লেখক সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যাপক আফসার আলী, তৌহিদ হোসেন, জানে আলম, তায়েদুল হক, আইনজীবী মাসুদ করিম প্রমুখ।